পদ্মদীঘি যে খালি হতে চলেছিল বুথফেরত সমীক্ষা এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল। মঙ্গলবার ভোট গণনা শুরু হতেই সেই ছবি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দিনের শেষে দেখা যায় কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়েছে বিজেপি। প্রত্যাশা মতই ফল করেছে কংগ্রেস। যদিও মধ্যপ্রদেশের কাঁটা দূর না হওয়ার ফলে বেশ রাত করেই সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন রাহুল গান্ধী। শুরুতেই দলীয় কর্মী এবং বিজয়ী নেতাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।
গণনার দিন সকালে যখন প্রায় সব রাজ্যেই বিজেপির বিদায় ঘণ্টা বাজছে তখন দশ জনপথে রাহুলের উদ্দেশ্যে সনিয়া গান্ধী বলেন, ‘এটা রাহুলের পরিশ্রমের ফল’। রাতে সাংবাদিক সম্মেলনে মানুষের সুবিধা অসুবিধার দিকে বিন্দুমাত্র ধ্যান না দেওয়ার জন্যে মোদীর বিরুদ্ধে জমে থাকা অসন্তোষ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা পূরণ করতে ব্যর্থ। আমরা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চাই। মোদী দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। তিনি সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনিন, এটাই তাঁর ব্যর্থতার কারণ। ক্ষমতায় আসার আগে তিনি চাকরি নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার কিছুই করতে পারেনি”। দুর্নীতির মত বিষয়কে সামনে রেখে মানুষের সহানুভূতি আদায় করেছিলেন তিনি এখন মানুষই বুঝে গেছে আসলে তিনিই দুর্নীতিগ্রস্ত!’
এই জয় রাহুল গান্ধীকে বেশ আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশে দু’জন করে, ছত্তীসগড়ে অন্তত তিন জন মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। কী ভাবে সামলাবেন? খুব সহজ স্বাভাবিক গলায় তিনি আশ্বস্ত করে জানান, মসৃণ ভাবেই সব সমস্যার সমাধান হবে। ভোটের আগে প্রচারে গিয়ে কৃষকদের ঋণ মকুবের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি, জানিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে কৃষি ঋণ মকুব করা হবে। প্রতিশ্রুতি মতই তিনি বলেন মধ্যপ্রদেশে কৃষিঋণ মকুব করা হবে।
ভোটে বিপর্যয়ের পরে মোদী-অমিত, কেউই প্রকাশ্যে আসেননি। মুখোমুখি হননি সাংবাদিক বা দলের নেতা-কর্মীদের। নমো-নমো করে টুইট করেই দায় সেরেছেন রাতে। মোদীকে কোণঠাসা করার এমন সুবর্ণ সুযোগ ছাড়েননি শিবসেনা প্রধান রাজ ঠাকরে। রাহুলকে নিয়ে টুইট করেছেন তিনিও। সাংবাদিক বৈঠকের শেষেও মোদীর প্রতি অসন্তোষ ব্যাক্ত করতে ছাড়েননি রাহুল, তিনি বলেন, “মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন তিনটি ইস্যু বড়ো করে দেখিয়েছিলেন। রোজগার, দুর্নীতি এবং উন্নয়ন। কিন্তু এখন সেই তিনটিই উধাও। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির আবর্তে। যে কারণে ৩ রাজ্যে বিজেপি হেরেছে। রাফালের দুর্নীতি তাঁর হাত ধরেই হয়েছে”। দলের ঊর্দ্ধে কেউ নয় এমনকি তিনিও না। সকলকে নিয়েই যে একসাথে কাজ করবেন তিনি এই বার্তাই দিয়ে গেলেন রাহুল গান্ধী।