মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘কন্যাশ্রী’ ইতিমধ্যেই বিশ্বের দরবারে ভীষণ ভাবে সমাদৃত হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছিল। রাজ্যের মেয়েরা যাতে পড়াশোনা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তার জন্যই ছিল এমন অনবদ্য প্রকল্পটি। এবার এই প্রকল্পের সার্থকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে এল ‘কন্যাশ্রী কলম’।
পুরুলিয়াতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে এই কলম সম্পর্কে জানতে পারেন মমতা। কলমগুলির দামও খুব কম, মাত্র ৫ টাকা। এই কলমের অভিনবত্ব হল, কালি শেষ হওয়ার পর রিফিল মাটি পুঁতে দিলেই গজিয়ে উঠবে গাছ। কিছুদিনের মধ্যে এই গাছ থেকে ফুল অথবা ফল পেয়ে যাবেন কলমের মালিক। পরিবেশবান্ধব এই কলম দেখে উচ্ছ্বসিত হন তিনি। তাঁর ইচ্ছানুসারেই এই কলমের নাম রাখা হয়েছে ‘কন্যাশ্রী’। ইতিমধ্যেই বিশ্ববাংলা স্টলেও জায়গা পেয়েছে এই কলমটি।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এবার থেকে সরকারি দফতরেও এই কলম ব্যবহার হবে। এই কলমের আবির্ভাব বেশ চমকপ্রদ। পুরুলিয়ার শিল্পমেলায় এর খোঁজ পান জেলার প্রোজেক্ট ম্যানেজার মৌমিতা মাহাতো। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, শম্পা রক্ষিত সেন নামে একজন মহিলা কেরালা থেকে এই কলম তৈরির কৌশল শিখে এসে মেলায় বিক্রি করছেন। রঘুনাথপুরের মহকুমা শাসক আকাঙ্ক্ষা ভাস্করের কাছে বিষয়টি বলেন মৌমিতা। তখনই স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে গিয়ে এই কলম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। তৈরি হচ্ছে পেন্সিলও। ব্লকের ৩২ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এদের মধ্যে ১৪ জন কন্যাশ্রী।
আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর বলেছেন, ‘এই কলম বিক্রি করে প্রথমে সপ্তাহে ৫০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তারপর ২ হাজার এবং এখন ৫ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। যেভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে তাতে আয় দ্রুত বাড়বে।’
অভিনব এই কলমটি তৈরি করছেন পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং কন্যাশ্রীরা। কলমের গায়ে থাকছে বিশ্ববাংলার লোগো। বিশ্ববাংলা স্টলে এই ‘কন্যাশ্রী কলম’ বিক্রি করবে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ দফতর। ইতিমধ্যেই পুরুলিয়ার পাড়া ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং কন্যাশ্রীদের কাছে আরও বরাত আসা শুরু হয়েছে। উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সংস্থা কিনেও নিয়ে যাচ্ছে।
এই কলমগুলিতে ভরা আছে শাল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, কার্পাস, পেয়ারা, পেঁপে গাছের বীজ। এসব গাছের বীজ পুঁতলে খুব একটা পরিচর্যা করতে হয় না। অথচ চারা গজিয়ে বেড়ে উঠতে থাকে।
শুধু স্বনির্ভর গোষ্ঠীই নয়, পঞ্চায়েত দফতরও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েতের প্রধান দফতরে এই কলমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেছেন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি। তিনি বলেন,‘খুব ভাল উদ্যোগ। এ ভাবে বিভিন্ন অভিনব প্রকল্পের মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলোকে যদি উদ্বুদ্ধ করা যায়, তবে তা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ হবে। ‘কন্যাশ্রী কলম’ শুভ উদ্যোগ, অভিনব উদ্যোগ।’ রাজ্যের সব শিল্পমেলাতেও এই কলম বিক্রির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাড়া ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ ব্যানার্জি বললেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা বিভিন্ন মেলায় এই কলমের সন্ধান নিয়ে পৌঁছে গেছি। অসম্ভব ভাল সাড়া পেয়েছি। সবলা মেলাগুলিতেও এই কলম পাওয়া যাবে।’
রাজ্যের কোন মেয়ে যাতে অর্থাভাবে লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য না হয় এবং প্রত্যেকে যাতে স্বনির্ভর হতে পারে এই ইচ্ছা মমতার বহুদিনেরই। সেই ইচ্ছারই মর্যাদা রাখছে কন্যাশ্রী কলম। রাজ্যের কন্যাশ্রীরা এবার সত্যিই স্বনির্ভরতার পথে অগ্রসর হচ্ছে।