মোদী-জমানায় বারবার বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে ভারতীয় রেল। চূড়ান্ত অব্যবস্থা ঘিরে দানা বেঁধেছে অসন্তোষ। এবার ফিরে এল ২০২৩-এর করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার হৃদয়বিদারক স্মৃতি। সোমবার সাতসকালে মালগাড়ির ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৃত ১১। স্বাভাবিকভাবেই কাঞ্চনজঙ্ঘার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর নানা প্রশ্ন, নানা সম্ভাবনার তত্ত্ব উঠে আসছে। সব সম্ভাবনাই একদিকে ইঙ্গিত করছে। তা হল রেল দফতরের চূড়ান্ত অব্যবস্থা এবং সমন্বয়ের অভাব। দাবি উঠছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের পদত্যাগের। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রেলমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সুর চড়িয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, এর আগে মাত্র দু’জন রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। প্রথমজন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত রেলমন্ত্রী ছিলেন শাস্ত্রী। এই কয়েক বছরের মধ্যে দু’বার পদত্যাগ করেন তিনি। প্রথমবার অন্ধ্রপ্রদেশের মাহবুবনগরের দুর্ঘটনায় ১১২ জনের মৃত্যুর পর। সেবার শাস্ত্রীর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। কিন্তু ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে তামিলনাড়ুর আরিয়ালুরে ফের দুর্ঘটনা হয়। এবার প্রাণ যায় ১৪৪ জনের। ফের পদত্যাগ করেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। এবার শুধু পদত্যাগ করা নয়, সেই সঙ্গে নেহেরুকে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার জন্য শাস্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, এরপরও বহু মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে দেশ। ১৯৮১ বিহার ট্রেন বিপর্যয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষ মারা যান। ১৯৯৫ ফিরোজাবাদ রেল বিপর্যয়ে অন্তত ৩৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এমন ছোটবড় বহু দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনও রেলমন্ত্রী তার দায় নেননি। এরপর ১৯৯৯ গাইসাল ট্রেন বিপর্যয়ের পর পদত্যাগ করেন আরেক রেলমন্ত্রী। গায়সালের দুর্ঘটনায় ২৯০ জন প্রাণ হারান। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন সেনাকর্মী। সেই ঘটনার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এরপরও বহু মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০০২ হাওড়া-নিউ দিল্লী রাজধানী এক্সপ্রেস, ২০১০ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বিপর্যয়, ২০১৬ ইন্দোর পাটনা দুর্ঘটনার মতো বিপর্যয়ে সব মিলিয়ে পাঁচশোর বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে। কিন্তু কোনওক্ষেত্রেই ঘটনার দায় নেননি রেলমন্ত্রীরা। গত বছর উড়িষ্যার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৯৬ জনের মৃত্যু হয়। তখনও রেলমন্ত্রী ছিলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। তখনও তিনি দায় নেননি। শুধু বাহানাগার দুর্ঘটনা নয়, অশ্বিনীর আমলেই রেলে দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। গত ৩ বছরেই রেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে প্রায় ৩৭০ জনের। স্বভাবতই বইছে বিতর্কের ঝড়। নিন্দার রোল উঠেছে সর্বত্র। কাঞ্চনজঙ্ঘায় দুর্ঘটনার দায় কি নেবেন অশ্বিনী? বর্তমানে সেদিকেই তাকিয়ে সারা দেশ।