বহুদিন পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাওয়া গেল পুরনো দিনের ঝাঁঝালো মেজাজে। একসময়ের লাল দুর্গ বর্ধমানে দাঁড়িয়েই বাম-রাম জোটকে কার্যত তুলোধনা করলেন তিনি। ফের ‘কৃষক দরদী’ সাজতে চেষ্টা করা সিপিএমকে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই-সহ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তাদের অপকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একের পর এক তোপ দাগলেন মমতা।
স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যদি পয়লা নম্বর দুশমন হয়, তবে দ্বিতীয় শত্রু অবশ্যই সিপিএম। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আসলে সিপিএমের ওপর মমতা ক্ষুব্ধ একটাই কারণে, তা হল যখন সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে দিল্লীর কুর্সি থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সব বিরোধী শক্তিকে এক ছাতার তলায় আনছেন মমতা, তখন বামেরা তাঁর বিরুদ্ধে নেমে সেই বিজেপির হাত শক্ত করছে। ডাকছে পাল্টা ব্রিগেড। যেন সামনেই বিধানসভা ভোট।
এমন পরিস্থিতিতে সিপিএম-কে নিজেদের অপকর্মের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের বিঁধে মমতা বলেন, ‘শুধু দাও দাও। ৩৪ বছরে কী দিয়েছে ওরা? সিঙ্গুরে জমি গ্রাস করা রাঘববোয়ালরা এখন বড় বড় কথা বলছে। নন্দীগ্রামে জমি দখল করতে নেমেছিল কারা? কারাই বা নেতাইয়ে মাওবাদীদের নামে কৃষকদের খুন করেছিল? মানুষ সব জানে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সিঙ্গুরে কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছি। ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারগুলিকে মাসিক দু’হাজার টাকা ভাতা এবং কম দামে চাল দিচ্ছি। সেটা আরও কিছুদিন দেব’।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে বিজেপিকে মদত দেওয়ার পাশাপাশি কৃষক দরদী সাজার লক্ষ্যে প্রাদেশিক কৃষক সভার ব্যানারে নানা দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পর্যন্ত লং মার্চ করেছিল সিপিএম। লং মার্চ শেষে সমাবেশে সিপিএম নেতাদের তরফে নানা আস্ফালনও শোনা গিয়েছিল। কালনার মঞ্চ থেকে তাঁরই প্রতিক্রিয়ায় এভাবে সিপিএম বিরোধিতার সুর চড়িয়েছেন মমতা।
পূর্ব বর্ধমান জেলার সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের সভা এদিন যাঁদের উপস্থিতিতে মহা সমাবেশের চেহারা নিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই ছিলেন কৃষক। তাঁদের সামনে একদিকে যেমন সিপিএমের উথলে ওঠা কৃষকপ্রেমকে কটাক্ষ করেছেন মমতা, তেমনই আবার কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে গত সাত বছর ধরে তাঁর সরকারের গৃহীত প্রকল্পের যাবতীয় বিবরণও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘আগামী ২০২২ সালের মধ্যে দেশের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে বলে দাবি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ এ রাজ্যের কৃষকদের রোজগার ইতিমধ্যেই তিনগুণ হয়েছে’। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘এই সরকার কৃষকদের পক্ষে, গরিব মানুষের পক্ষে। কৃষকদের ক্ষতি হয়, এমন কোনও কাজ এই সরকার করবে না’। এরপরই কৃষি জমির খাজনা মকুব, কৃষি জমির মিউটেশন ফি প্রত্যাহার, শস্য বিমার প্রিমিয়াম প্রদান, কৃষক পেনশনের পরিমাণ বৃদ্ধি করার মতো যাবতীয় পদক্ষেপগুলির বিবরণ যখনই দিয়েছেন মমতা, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে সভাস্থল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে প্রচার করছে, শস্য বিমার প্রিমিয়াম নাকি কেন্দ্র সরকার দেয়। এটা ভুল কথা। কৃষকদের শস্য বিমার প্রিমিয়াম সরাসরি আমরা ব্যাঙ্কে দিয়ে দিই। ব্যাঙ্ক থেকে তা আপনাদের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়’।
সরকার ঘোষিত নীতি অনুযায়ী বিনামূল্যে সবার জন্য চিকিৎসা সত্ত্বেও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মী সাধারণ মানুষের থেকে টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ। সভায় সেই বিষয়ে মমতা বলেন, ‘টাকা ফেরত দিতে হবে। এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সিপিএমের এমন কিছু কর্মী রয়েছে, যারা সবসময় ইধার-উধার করে সরকারকে বদনাম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সিপিএমের একজনেরও চাকরি খাইনি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জনগণের কাজটা আগে। কাজ ফেলে, শুধু এটা দাও, সেটা দাও বলে চিৎকার করলে চলবে না। অনেক সর্বনাশ করেছ, আর নয়’।