মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শস্য সংরক্ষণের জন্য ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে ‘আমার গোলা, আমার ফসল’ ইত্যাদি প্রকল্প৷ এবার ধান সংরক্ষণ ও বহনের জন্য দুটি নতুন প্রকল্প চালু করলেন তিনি৷ শুক্রবার কালনার অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামের সভায় ‘পলি গোলা’ ও ‘পলি চাতাল’ নামে এই জোড়া প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মমতা৷
শস্য সংরক্ষণের আগের প্রকল্পটিতে ধান শুকানোর জন্য চাতাল তৈরীতে আর্থিক সহায়তা করত রাজ্য সরকার৷ কিন্তু চাতালের জন্য উপযুক্ত জমি পাওয়ার সমস্যা হচ্ছে এবং সিমেন্টের চাতাল তৈরি করলে ধান ভাল শুকোচ্ছে না ফলে বস্তাপিছু ৫ থেকে ৭ কেজি ধান খাদ হিসেবে ফেলা যাচ্ছে। লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। তাই এই দুই প্রকল্পের ভাবনা। এই গোলা বা চাতাল বহনযোগ্য হওয়ায় সুবিধেও খুব বলে দাবি করছেন উপভোক্তারা। জমি বা স্থায়ী চাতাল তৈরির সমস্যা থাকবে না। কাজ শেষ হলে গুটিয়ে রাখা যাবে। এই দুই প্রকল্পে আর্থিক দিক থেকে উপকৃত হবেন প্রান্তিক কৃষকেরা।
প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পূর্ব বর্ধমানে এ বছর আমন ধানে সেচের সঙ্কট দেখা দিয়েছে৷ তাই কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষি আধিকারিকদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে স্থির হয়, বোরো ধানের জন্য সঞ্চিত জল থেকে কিছু পরিমাণ জল আমন ধানের সেচে দেওয়া হবে৷ বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া সাবমার্সিবল পাম্পগুলিতে তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সেচের অভাব মেটানো হবে বলে জানা গেছে৷ অন্যদিকে ডিভিসি অন্যবারের তুলনায় কম জল দেবে বলে ঘোষণা করায় রবি ও বোরো চাষেও সেচের সঙ্কট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা কৃষকদের৷
সেচের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার লক্ষ্যে ওই সভায় মমতা জানান নিম্ন দামোদর অববাহিকায় একটি বড়সড় বেসিন প্রজেক্ট তৈরীর কথা৷ কৃষকদের শস্যবীমা করার ওপরেও তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘কৃষকদের শস্যবিমার প্রিমিয়ামের শেয়ার যেটা দেওয়া হয়, সেটা রাজ্য দেয়। কেন্দ্র নয়।’ এই টাকায় ৬০ বছর বয়সের পর এককালীন টাকা ও পেনশন মিলবে। সন্তানদের শিক্ষার জন্য অর্থসাহায্য মিলবে।’
ধান সংরক্ষণের নতুন প্রকল্প দুটি যত শীঘ্র সম্ভব শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, উত্তর দিনাজপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও জলপাইগুড়ির ১০ জনের হাতে এই দুই প্রকল্পের কাগজ তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রাথমিকভাবে এই ৫ জেলায় পাইলট প্রজেক্ট গড়ে ২৬ হাজার প্রান্তিক কৃষককে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
পূর্ব বর্ধমানের ৭৫০ জন উপভোক্তাকে পলি গোলা ও ৯১০০ জনকে পলি চাতাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজ্যের কৃষি বিপণন দপ্তরের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি রূপায়িত হচ্ছে। গোলাগুলিতে ৫০০ কেজি পর্যন্ত ধান রাখা যাবে। চাতালটি ৪৮ বর্গমিটারের। আর এর সবথেকে বেশি সুবিধে হল, ইঁদুরে ধান খাওয়ার আশঙ্কা থাকছে না।