‘সাহসী না হলে তৃণমূল করতে হবে না’। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এভাবেই প্রশাসন ও দলকে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
৫ জেলায় সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রী। আজ মঙ্গলবার পুরুলিয়ায় বৈঠক করেন তিনি। সেখানেই প্রশাসন ও দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বচ্ছতা, সততা ও সাহসী হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কমিশন ও তোলাবাজি রুখতেও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকের শুরুতেই তিন থানার ওসিকে দাঁড় করিয়ে ভর্তসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এলাকায় নয়া শিল্প প্রকল্পগুলিতে তোলাবাজির অভিযোগের প্রসঙ্গ তুলে তিনি ওসিকে প্রশ্ন করেন, ‘বহিরাগতরা কীভাবে ঢুকছে এলাকায়? বহিরাগতরা ঢুকে অশান্তি করছে, আপনারা কী করছেন? আপনার এলাকায় আপনারা কেন কিছু করছেন না? তোলাবাজি চলবে না, আবারও বলে দিলাম। যাঁরা যাঁরা মনে করছেন টাকা তোলার দরকার আছে, আমাদের সঙ্গে থাকবেন না’। রঘুনাথপুরের ওসিকেও মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি ওসি, কিন্তু দেখে স্ট্রং মনে হচ্ছে না। পুলিশকে স্ট্রং হতে হয়’।
এরপর রঘুনাথগঞ্জের বিধায়কের থেকে এলাকা উন্নয়নের বিষয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বিধায়ক আমতা আমতা করছেন দেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলেন, ‘আপনি স্ট্রং নয়, সাহসী হোন। সাহসী না হলে তৃণমূল করতে হবে না’।
প্রশাসনিক সভা থেকে সেচে জোর দেওয়ার কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেচের ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। খরা অধ্যুষিত জেলার জন্য মনিটারিং কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি নোডাল অফিস তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
চাষিরা কেন লোন পাচ্ছেন না, সেবিষয়ে এদিন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাজনীতি করবেন না, চাষিদের লোন দেবেন।‘ এরপরই সমবায় ব্যাঙ্ককে পুরুলিয়ায় নজর দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই জেলায় নজর দিতে হবে। আমাদের সমবায় থেকে দেখো চাষিদের টাকা দেওয়া যাবে কিনা।‘ বিধায়ক পূর্ণ বাউড়ি সমবায়ের দায়িত্বে ছিলেন। এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁকে দাঁড় করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তোমার দ্বারা একাজ ঠিকভাবে হবে না। তুমি ছেড়ে দাও।‘ এরপরই জেলাশাসককে তিনি নির্দেশ দেন, ‘ডিএম, এবার থেকে তুমি সমবায়ের ব্যাপারটা দেখে নেবে।‘
পুরুলিয়ার গ্রামীণ সড়ক প্রকল্প, কিষাণ মাণ্ডি নির্মাণের শ্লথ গতি ও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বিলি নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা শাসক ও প্রশাসনকে দ্রুত বকেয়া কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘অর্ধসমাপ্ত কাজ, অসমাপ্ত কাজ বরদাস্ত করব না। সব কাজ সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে’।
এরপর আদিবাসী প্রসঙ্গ টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেখবেন গরিব মানুষগুলো যেন অবহেলিত না হয়, প্রত্যেকে যেন বাড়ি পায়। আদিবাসীরা খুবই সংবেদনশীল। অনেক এঁদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দেয়। ঝামেলা লাগাতে পারলে কিছু মানুষের স্বার্থসিদ্ধি হয়’।
পুরুলিয়ার ছড়রা বিমানবন্দরের কাজ দ্রুত শেষ করার ও জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি টিকাকরণ কর্মসূচি সফল করতে আদিবাসীদের বোঝানো ও ইমামদের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ জেলা প্রশাসনকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শিশু অপুষ্টি, এলাকা উন্নয়ন, আমার বাড়ি প্রকল্পে গরিবদের সাহায্য, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এদিন তিনি নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এই প্রশাসনিক বৈঠকের পর শিমুলতলায় হিন্দীভাষীদের সঙ্গে আলাদাভাবে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।