১১১ দিন অনশনে থাকাকালীন একবারও খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মৃত্যুর পর একটি টুইটে শোক প্রকাশ করেই দায় সেরেছেন তিনি। লিখেছেন, ‘গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার জন্য জি ডি অগ্রবালজীর লড়াই ভোলা যাবে না। তাঁকে মানুষ মনে রাখবে’। অথচ সেই গঙ্গাকে দূষণ মুক্ত করার লক্ষ্যে আশু ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৬ বছর বয়সী পরিবেশবিদ অগ্রবালের লেখা তিন-তিনটি চিঠির জবাবই দেননি প্রধানমন্ত্রী। প্রথম দু’টি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘ভাই’ সম্বোধন করেছিলেন অগ্রবাল। কোনওটারই জবাব না পেয়ে শেষ চিঠিতে আর ‘ভাই’ না লিখে শুধুই ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’ লিখেছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মোদীকে তাঁর প্রথম চিঠিটি অগ্রবাল পাঠিয়েছিলেন চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রায় চার মাস উত্তরের অপেক্ষায় থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দ্বিতীয় চিঠিটি অগ্রবাল লিখেছিলেন গত ১৩ জুন। না, তারও জবাব আসেনি। জবাব এল না দেখে গত ২২ জুন থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন পরিবেশবিদ জি ডি অগ্রবাল ওরফে স্বামী জ্ঞানস্বরূপ সানন্দ। তারপর প্রধানমন্ত্রীর উত্তরের অপেক্ষায় কাটান আরও দেড় মাস। না, তখনও জবাব আসেনি। উপায়ান্তর না দেখে অগ্রবাল ফের চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রীকে। গত ৫ই আগস্ট। তারও জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি প্রধানমন্ত্রী। অগ্রবালকে শুধু একটা চিঠি লিখেছিলেন মোদী সরকারের জলসম্পদ ও ‘গঙ্গা বাঁচাও’ মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী নীতিন গডকড়ী। অগ্রবালকে অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দাবি না মানা হলে অনশন চালিয়ে যাবেন বলে অগ্রবাল আগেই ঘোষণা করেছিলেন।
নীতিন গডকড়ী জানিয়েছেন, ওঁর (অগ্রবাল) প্রায় সবকর্টি দাবিই সরকার মেনে নিয়েছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। গঙ্গা বাঁচানোর জন্য খসড়া আইনটি কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার ঠিক এক দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জারি করা একটি গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গঙ্গার গতিপথের বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশ রক্ষার ন্যূনতম শর্তগুলি মেনে চলতে হবে। ব্যস, ওইটুকুই! আর গঙ্গার বুকে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি না করার দাবি প্রসঙ্গে নীতিনের সাফাই, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ডেকে সমাধান খোঁজার তোড়জোড় চলছিল।
এখন প্রশ্ন, তবে কি খামোকাই অনশনে প্রাণ দিলেন সন্ত জ্ঞানস্বরূপ ওরফে জিডি অগ্রবাল?