লালবাজার থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে ৩২২ পাতার পুজো-নিরাপত্তা সংক্রান্ত পুস্তিকা। সেখানে উল্লেখ রয়েছে, উৎসবের দিনগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় সামাল দেওয়া বা ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ করা, রাজ্যের নিরাপত্তার খেয়াল রাখা, পার্কিং সমস্যা মেটানো, পরিবহন সচল রাখাই পুলিশের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, জরুরি পরিষেবা প্রদান বা ভিড়ের মধ্যে হওয়া অসামাজিক কার্যকলাপ দমনের মত কাজ তো আছেই।
পুজোর সময় ঠাকুর দেখতে যাঁরা গাড়ি নিয়ে বের হবেন, গাড়ির সামনের এবং পেছনের কাচে ড্রাইভারের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখতে হবে। পার্কিং নিয়ে সমস্যা দূর করতেই কলকাতা পুলিশ এই উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে–সেখানে গাড়ি পার্ক করলে, ওই নম্বরে ফোন করে পুলিশ গাড়ি সরিয়ে নিতে বলবে। যদি চালককে না পাওয়া যায়, তাহলে পুলিশ নিজের উদ্যোগেই গাড়ি সরিয়ে দেবে।
আজ শনিবার থেকেই পথে নামবে পুলিশ। পঞ্চমী থেকে মোট ৮ হাজার পুলিশ কর্মী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৪০০টি পিকেট বসানো হবে। ৩ শিফটে পুলিশ কর্মীরা দায়িত্বে থাকবেন। ভোর ৪টে থেকে বিকেল ৪টে, বিকেল ৪টে থেকে রাত ১২টা, রাত ১২টা থেকে পরের দিন ভোর ৪টে পর্যন্ত ডিউটি চলবে। দশমী থেকে দ্বাদশী, যাঁরা ভাসান দেবেন না, তাঁদের জন্য ৩টে শিফটে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।
পুজো উপলক্ষে ইতিমধ্যেই শপিং মল, বাজার, বড় হোটেল, বাসস্ট্যান্ড এবং রেল স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনও বস্তু বা সন্দেহজনক ব্যক্তিকে দেখলে, লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ১০০ ডায়ালে ফোন করে জানানো যাবে। পুজোর দিনগুলোতে কোনও দুর্ঘটনা বা অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৭টি ট্রমা কেয়ার ইউনিট মজুত থাকবে। আগুন লাগলে ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছতে দমকলের গাড়ি এসকর্ট করে পৌঁছে দেওয়া হবে। ৭টি মোবাইল পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্স বুথ থাকবে।
এছাড়া ৯টি মিসিং পার্সনস স্কোয়াড থাকবে। পুজোয় কেউ হারিয়ে গেলে নাম, পরিচয়, ছবি দিয়ে এখানে যোগাযোগ করলে পুলিশ খোঁজ শুরু করবে। ২৩টি মেট্রো স্টেশনেই পিকেট থাকবে। লালবাজার থেকে তা মনিটরিং করা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ প্রত্যেকদিন খতিয়ে দেখা হবে। ভাসানে ডিস্ক জকি চলবে না। এছাড়া পুজোর দিনগুলির জন্য অস্থায়ী ৫ হাজার হোমগার্ড নিয়োগ করা হবে।
ভাসানের জন্য স্পিড বোট, লঞ্চ, ডুবুরি তো থাকবেই, এছাড়া ২৩টি ঘাটে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুজো উপলক্ষে কলকাতা শহরে ঢোকা ও বেরনোর সমস্ত রাস্তাতেই নাকা চেকিং শুরু হয়ে গেছে। পুজোর দিনগুলিতে যাতে শহরে কোনও ধরনের দুষ্কৃতী হামলা বা কেউ বিস্ফোরক জাতীয় কিছু না আনতে পারে তাই এই চেকিং।
শহরে কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ নগরপালদের ইতিমধ্যেই থানাগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি থানাকে বলা আছে, অনভিপ্রেত ব্যক্তি বা বস্তু সম্পর্কে খবর এলেই তৎক্ষণাৎ বিষয়টি দেখতে। এছাড়া পুজো প্যান্ডেলে বা রাস্তায় মহিলাদের ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দশমীর পরেও বেশ কিছু পুজো প্যান্ডেলে ঠাকুর থাকবে। সেখানে মানুষ আসবে ধরে নিয়েই দ্বাদশী পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিসর্জনের জন্য ২৪টি ঘাটে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (ডিএমজি) থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে।