প্রায় ২১০০ বছর আগে রাজস্থানে হয়েছিল প্রথম দুর্গাপুজো। এমনটাই বলছে ইতিহাস। আর সেই ২১০০ বছরের প্রাচীন দুর্গার আদলেই এবার গঙ্গাবক্ষে আস্ত জাহাজের উপর মণ্ডপসজ্জা করে পুজো হচ্ছে হাওড়া রামকৃষ্ণপুর ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। এই ২১০০ বছরের প্রাচীন দুর্গা প্রতিমার আদলে তৈরি ঠাকুর দেখাই এবার হাওড়ায় অন্যতম আকর্ষণ।
হাওড়ায় রামকৃষ্ণপুর ঘাটের পারে রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে এই প্রতিমা হচ্ছে। ইতিহাসে প্রমাণ আছে, খ্রিস্টপূর্ব ১০০ বছর আগে পুষ্যমিত্র শূঙ্গ এই প্রতিমায় পুজো করেছিলেন। পরবর্তীকালে তা রাজস্থানে খননকাজের সময় উদ্ধার হয়। ওই প্রতিমার আদলেই দেবী দুর্গা তৈরি করে রামকৃষ্ণ স্বামীজি স্মৃতি সংঘ এই পুজো করছে।
উদ্যোক্তারা বলেন, ওই আদলের প্রতিমা প্রায় ৬০০ বছর পুজো হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেবী অসুরকে বধ করছেন, তা প্রতিমায় দেখানো শুরু হয়েছে। সেই কারণেই এই প্রাচীন রীতি মেনেই আমরা ওই আদলেই দেবী দুর্গা তৈরি করছি। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে গঙ্গাবক্ষে পুজো করা হচ্ছে না।
উদ্যোক্তারা আরও বলেন, এখানে মায়ের চার হাত। মহিষের লেজ মর্দনরত, মা সিংহবাহিনী। মায়ের এক হাতে ত্রিশূল, অন্য হাতে ঢাল, তৃতীয় হাতে একটি বিশেষ মুদ্রা। মায়ের কেশরাশি অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে দু’দিকে খোঁপা করা, মাথায় মুকুট পরিহিতা। গান্ধার স্থাপত্যের প্রভাব রয়েছে। এখানে মূর্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কিছুটা ইলোরার ধাঁচে মণ্ডপের মধ্যে মায়ের আগমন ঘটেছে। এই প্রাচীন আবহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়েছে।
পুজো কমিটির সভাপতি সত্যব্রত সামন্ত বলেছেন, ভারতীয় সংস্কৃতি, কলাকে তুলে ধরতেই এই প্রাচীন প্রতিমার আদলে আমরা পুজো করছি। এতে দর্শকরা ভারতীয় সংস্কৃতি যে কতটা প্রাচীন তা বুঝতে পারবেন। তাই এবার এই পুজোর আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শে পর্যটন দপ্তর ক্রুজে করে প্রতিমা দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ক্রুজে করে যাঁরা প্রতিমা দেখতে বের হবেন, তাঁরাও এই প্রতিমা দেখতে পাবেন। পুজো কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, প্রশাসনিক সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনেই এই পুজো হবে।
রামকৃষ্ণপুর ঘাটের পাড়ে এই পুজো দেখার জন্য হাওড়ায় মানুষের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ চোখে পড়েছে। ঠাকুর দেখার ভিড় এড়াতে তাই এক দিকে ঢোকা ও অন্য রাস্তা দিয়ে বের করা হবে। হাওড়া স্টেশনেরও খুব কাছেই এই পুজো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই, পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও প্রচুর মানুষ এই প্রতিমা দেখতে আসবেন। তাই হাওড়া স্টেশন থেকে রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্তও আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা জানান, এবার এই পুজো হাওড়ায় অন্যতম চমক। সেই কারণেই ব্যাপক ভিড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই লোহার কাঠামো দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করা হচ্ছে। ভিড়ের কথা মাথায় রেখেই পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থাও থাকবে বলে হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, ফোরশোর রোডকে আলোর রোশনাইয়ে ভরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাতে বহু দূর থেকেও এই মণ্ডপসজ্জা স্পষ্ট দেখা যায়। জাহাজের চারপাশ থেকে চন্দননগরের শিল্পীদের আলোর মায়াজাল রবীন্দ্র সেতু, দ্বিতীয় হুগলি সেতু থেকে শুরু করে কলকাতার দিকে মিলেনিয়াম পার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। থ্রি ডি আলোকসজ্জার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলুমিনেশন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপকদের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। অন্ধকারে হাওড়া ব্রিজ থেকে বিদ্যাসাগর সেতু পর্যন্ত গঙ্গায় আলোর মায়াজাল তৈরি করা হবে।
ইতিহাসের সন্ধান পেতে অবশ্য কম পরিশ্রম করতে হয়নি উদ্যোক্তাদের। তাঁদের দাবি, এই পুজো এবার হাওড়া তো বটেই, কলকাতার বড় পুজোকেও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে।