বিজেপি জমানায় ১৪.৭ লক্ষ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির অভিযোগ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার রাতে মুকুল-কৈলাসের ফাঁস হওয়া কথোপকথনের দ্বিতীয় অডিও ক্লিপে ২ কোটি টাকার প্রসঙ্গ সেটাতেই সীলমোহর দিল। পাশাপাশি মোদী-শাহের বিরুদ্ধে টাকা ছড়িয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী দলের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়ার অভিযোগও মান্যতা পেল। সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দিল, এরপরও কি দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার থাকে বিজেপির?
কালো টাকা দেশে ফেরানোর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেজন্য নোটবন্দী, জিএসটি-এর মতো পদক্ষেপ করেছেন। তাতে অবশ্য আমজনতার কষ্টবৃদ্ধি ছাড়া লাভের লাভ কিছু হয়নি। উল্টে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোক্সিদের মতো ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকার দেনা না শুধেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। শুধু ২০১৭-১৮ আর্থিক বর্ষেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ১১৪০০ কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ব্যাপম কেলেঙ্কারি থেকে রাফাল, বিজেপির বিরুদ্ধে আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগের তালিকাটা বেশ লম্বা। বাংলায় বিজেপি ক্ষমতা থেকে শত হস্ত দূরে। কিন্তু কেন্দ্রীয় শাসক দল হওয়ার সুবাদে বঙ্গের বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধেও একের পর এক আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে এলপিজি গ্যাস দুর্নীতি। জেল খাটছেন বাংলার একাধিক বিজেপি নেতা। এসবের সঙ্গে শিল্পপতিদের অনৈতিক সুবিধে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তো আছেই। আদানিদের জমি কেলেঙ্কারি থেকে হালআমলে রাফাল যুদ্ধবিমানের বরাত আম্বানিদের পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ। যা নিয়ে সম্প্রতি মুখ খুলেছিলেন প্রাক্তণ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওল্যাদ স্বয়ং। এরপরও কি দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার থাকে বিজেপির?
ললিত মোদি থেকে নীরব মোদি- বিজেপি জমানায় একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। ৫৮ হাজার কোটির রাফাল দুর্নীতি থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা লুঠ। আর্থিক প্রতারকদের দেশ ছেড়ে পালানো। রাজ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়ে টাকার খেলায় নামা বিজেপি নেতাদের ফাঁস হওয়া ফোনালাপ। এসবই বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ‘পা থেকে মাথা পর্যন্ত’ আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ডুবে থাকার অভিযোগকেই আরও পুষ্ট করে। সঙ্গে প্রশ্ন তোলে, এরপরও কি দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার থাকে বিজেপির?
দুর্নীতি ইস্যুতে অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁচেছে যে দলের নেতা-কর্মীরাই সরব হয়েছেন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। যোগগুরু রামদেবের মতো অতি বড় সমর্থকও সরে দাঁড়িয়েছেন বিজেপির থেকে। ‘সরকারকে এর দাম চোকাতে হবে’ বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরির মতো দলীয় নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দেগে বলেছেন, ‘বোফর্স তো কিছুই নয়, রাফালের এর চেয়ে আরও বড় দুর্নীতি করেছে মোদী সরকার’। এমনকি পদের অপব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থাকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগও করেছেন তাঁরা। এরপরও কি দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করার নৈতিক অধিকার থাকে বিজেপির?