লোক ঠকানোর দিন শেষ; এবার আর প্রোমোটারদের দৌরাত্ম বরদাস্ত করবে না প্রশাসন। রাজ্যে প্রোমোটারদের লোক ঠকানো বন্ধ করতে এবার চালু হচ্ছে ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইন্ডাস্ট্রি রেগুলেটরি অথরিটি (হিরা) অ্যাক্ট এবং তার ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটে প্রোমোটার-ডেভেলপাররা তাদের প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন। যেখানে জানাতে হবে, জমির পরিমাণ কত, জমি কিনে বিল্ডিং তৈরি হবে না যৌথ উদ্যোগে প্রোমোটিং হবে, জমির মালিকানা কার নামে রয়েছে, জমিতে কোনও মামলা আছে কি না, দখলিস্বত্ব কার নামে আছে, জমির চরিত্র কী, বুকিং রেট কত, আর্থিক লেনদেন কীভাবে হবে ইত্যাদি। যে কোনও ফ্ল্যাটের ক্রেতা ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ওই প্রকল্পে নির্মাণ কতদূর এগোল এবং আর্থিক লেনদেন কী কী হয়েছে, তা প্রতি মুহূর্তে জানতে পারবেন। ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস হল- hira.wb.gov.in। এছাড়া ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইন্ডাস্ট্রি অ্যাক্টের তিন নম্বর ধারা অনুযায়ী নির্মাণ প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশনও বাধ্যতামূলক হতে চলেছে।
নবান্ন সূত্রে খবর, বুধবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই হিরা ওয়েবসাইট তৈরির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে তা প্রকাশিত হবে। ইতিমধ্যে ২০১৭ সালের অক্টোবর হিরা অ্যাক্ট তৈরি হয়। এ বছর ১ জুন থেকে তা কার্যকর হয়। সেই আইনেই প্রোমোটার-ডেভেলপারদের হিরা রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। এর জন্য ফর্ম এ এবং ফর্ম বি অনলাইনেই পূরণ করতে হবে প্রোমোটারদের। যেখানে ফর্ম এ-তে জমির চরিত্র, হলফনামা, বুকিং চার্জ, আলাদা কনস্ট্রাকশন অ্যাকাউন্ট, প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের নাম-ঠিকানা, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন-সবই আপলোড করতে হবে। ফর্ম বি-তে প্রজেক্টের রেজিস্টেশনের জন্য আবেদন করতে হবে। দিতে হবে ফ্ল্যাট সেলের চুক্তিপত্র। ক্রেতার সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রির সমস্ত বিবরণ বিশদে তুলে ধরতে হবে।
জানা গেছে, এর জন্য তৈরি হয়েছে একটি অফিস। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘ডব্লুবি হিরা অফিস’। যে অফিস থেকে এইসব আবেদনের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ফর্ম সি-তে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। আর যদি কোনও গোলমাল থাকে, তাহলে কেন দেওয়া হল না, তাও উল্লেখ করা হবে। ইএম বাইপাসের ধারে সার্ভে পার্কে কলকাতা গ্রিনস কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স-এর মধ্যে ওই হিরা অফিস চালু হয়েছে। সেই অফিসের মাথায় রয়েছেন ডব্লুবিসিএস অফিসার অদীপ রায় নামে যুগ্মসচিব পর্যায়ের এক অফিসার। এই মুহূর্তে রয়েছেন আরও ১০ জন। যাঁরা প্রোমোটার-ডেভেলপারদের দেওয়া কাগজপত্র খতিয়ে দেখে রেজিস্ট্রেশন দেবেন। এই রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন প্রোমোটাররা। পাবেন অন্য সরকারি সুবিধাও। সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাট বিক্রিতে থাকবে স্বচ্ছতা।
যাঁদের প্রকল্পে আটটির বেশি ফ্ল্যাট থাকবে বা ৫০০ বর্গ মিটারের বেশি জমিতে বহুতল হবে, তাঁদেরই হিরা ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক করতে চায় নবান্ন। ওই সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্ল্যাট কেনাবেচা নিয়ে জালিয়াতি বন্ধ করতেই এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। এর ফলে প্রোমোটিংয়ে অনেক স্বচ্ছতা চলে আসবে। লোক ঠকানো বন্ধ হয়ে যাবে। এই ওয়েবসাইট চালুর জন্য একটি সফটওয়্যার চালু করেছে আবাসন দপ্তর। ঘরে বসেই যে কেউ তার প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি দেখতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রকল্পের প্ল্যান অনুমোদন হল কি না, জমির কাগজপত্র ঠিক আছে কি না, তাও জানতে পারবেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের স্বার্থেই এই ব্যবস্থা নিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। বহুদিন ধরেই প্রমোটার রাজ নিয়ে বহু অভিযোগ কানে এসেছিল মমতার। অবশেষে এর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিল রাজ্য।