প্রতি বিধানসভায় ১০০ জন করে তৃণমূলের সাইবার সৈনিক চাই। তাঁরা যুক্তি পরিসংখ্যান দিয়ে সরকারের উন্নয়ন এবং দলের সাফল্যের কথা তুলে ধরবেন’। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতন করতে সোমবার দুপুরে নজরুল মঞ্চে তৃণমূল ডিজিটাল কনক্লেভের আয়োজন করেছিল। সেখানেই বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে একথা বলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক ময়দান ‘সোশ্যাল’ যে কেবল সামাজিক অর্থে নয় বরং আরও বেশি ‘ভার্চুয়াল অস্তিত্বকেও’ জানান দেওয়ার বার্তা দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘২০১১–য় ক্ষমতায় আসার পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এই সাত বছরে যে উন্নয়ন করেছেন, তার প্রচারও এখন থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত করতে হবে। পাশাপাশি দলেরও প্রচার করতে হবে। সরকারের বড় প্রকল্পগুলি যেভাবে কাজ করছে, তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে’। দলের সকলকেই সোশ্যাল মিডিয়ার কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এখন সবার হাতে মোবাইল। তাতে ফ্রি নেট। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই দলের কথা কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া খুব সহজ’। পাশাপাশি দলীয় কর্মীদের সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘মোবাইল আছে মানেই নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট করলে সহজে লাইক, কমেন্ট পাওয়া যায় দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা যায় না। তার জন্য যুক্তি পরিসংখ্যান দিয়ে কথা বলতে হবে। আমি চাই, প্রতি বিধানসভায় ১০০ জন করে তৃণমূলের সাইবার সৈনিক কাজ করুক। তাঁরা দলের কথা, সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন’। এর সঙ্গেই ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে কর্মীদের সচেতন হতে বলেন অভিষেক। জানিয়ে দেন, ‘ফেক নিউজ দেখলেই সত্যিটা জানিয়ে প্রতিবাদ করুন। একদিকে বিরোধীদের পরাজিত করতে করতে হবে, অন্যদিকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে’।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একদা যে রাজনৈতিক পথ পেরিয়ে এসেছেন, সেখানে তাঁর মুখের কথাই ছিল কয়েক কোটি জনতার লড়াই করে বেঁচে থাকার ‘অক্সিজেন’৷ রাস্তায় নেমে লড়াই আর লাল শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আর প্রতিবাদের ভাষা, আজকের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিখিয়েছিলেন বাংলার মানুষকে।
কিন্তু যুগ পাল্টেছে। রাজনীতির গতিপথ ঘুরেছে অন্যদিকে। এখন ভার্চুয়াল দুনিয়ায় মানুষ সময় কাটায় অনেক বেশী। একই সঙ্গে গুরুত্ব কমেছে পড়ার মোড়ের পলিটিক্যাল আড্ডার। এখন যেন ফেসবুক গ্রুপেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে।
ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও জোর দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ২০১৩ সালে বিজেপির ক্ষমতায় আসার নেপথ্যে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর নামের এক মিডিয়া প্রফেশনাল। সেই প্রশান্ত কিশোরই আবার বিহার বিধানসভা ভোটে লালু-নীতিশের নির্বাচনী প্রচার এবং মিডিয়া সেল পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এই প্রশান্ত কিশোরকেও নিজেদের দলে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে তৃণমূল।
ইতিমধ্যেই টুইটারে অভিষেকের ফলোয়ার সংখ্যা ২৭ লক্ষ ছাড়িয়েছে। টুইটারেই অনেক প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও টুইটার ফলোয়ার ২.৯ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গিয়েছে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য টুইটারেই পাওয়া যায়। এই ব্যাপারে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তাঁদের মিল রয়েছে। এবার দল হিসাবেও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তৃণমূল। অভিষেকের হাত ধরে তার কাজ শুরু হয়ে গেল আজ থেকেই।