বুথস্তর থেকে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন জোরদার করার ডাক দিলেন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার সকালে তমলুক ব্লক অফিসে নবনির্বাচিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিজেপি–কে ‘হনুমানের দল’ বলে কটাক্ষ করেন মন্ত্রী। রাজ্যের উন্নয়ন আর কেন্দ্রের শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সংগঠিত করে ২০১৯ সালে বিজেপিকে দেশের ক্ষমতা থেকে উৎখাতেরও নির্দেশ দিলেন তিনি।
বিজেপি–কে আক্রমণ শানিয়ে শুভেন্দু এদিন বলেন, ‘হনুমানদের দল মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন ঘটিয়ে অশান্তি করার চেষ্টা করছে। ওদের ওই বিভাজনের রাজনীতিকে রুখে দিতে হবে। গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষকে নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ওরা উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই চায়ের দোকান, বাসস্ট্যান্ড, পাড়ার মোড়ে ধর্ম নিয়ে উসকানি দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এই সাম্প্রদায়িক সরকারের জনবিরোধী নীতি সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। জিএসটি, নোট বাতিলের মাধ্যমে মানুষকে শোষণ করেছে। পেট্রোল, ডিজেল ও রান্নার গ্যাসের দাম প্রতিদিন বাড়াচ্ছে। সমস্ত দিক থেকে মানুষের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের প্রচার চালাতে হবে।’
এদিনের সভায় শুভেন্দু ছাড়াও বিধায়ক সংগ্রাম দোলই, জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা, তমলুক পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ সেন, তমলুক পঞ্চায়েত সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি কাজল কর, সহসভাপতি অশোক গোস্বামী–সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তমলুকের সভা শেষ করে কোলাঘাটে যান মন্ত্রী। সেখানে পঞ্চায়েত সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি তপন ঘড়া ও সহসভাপতি রাজকুমার কুণ্ড–সহ নবনির্বাচিত ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের শুভেচ্ছা জানান। নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তিনি বলেন, ‘মানুষের সমর্থন পেয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন। তাই দল বা রং না দেখে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। আমি–আমি না করে আমরা অর্থাৎ সকলকে নিয়ে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। সব সময় মানুষের পাশে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচির সুবিধা সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।’
তমলুক এবং কোলাঘাটের সভামঞ্চে দঁাড়িয়ে এদিন মন্ত্রী জনপ্রতিনিধিদের কী কী কাজ করতে হবে তার রূপরেখাও তৈরি করে দেন। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী শিশু সাথী, সমব্যাথীর মতো ৬০টি নতুন প্রকল্প চালু করেছেন। প্রতিটি প্রকল্পের সুবিধা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ১০০ দিনের প্রকল্পে আরও বেশি করে মানুষকে কাজ দিতে হবে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমস্ত সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে হবে। বাংলা আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি তৈরি করে দিতে হবে।’ স্কুলের মিড–ডে মিলের গুণগতমান পরীক্ষার দায়িত্বও জনপ্রতিনিধিদের নেওয়ার পরামর্শ দেন মন্ত্রী। মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ১২টি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এবং সভাধিপতি নতুন করে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
এদিন মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এবার তমলুক ব্লকের সমস্ত আসনেই লড়াই হয়েছিল। নির্বাচনে ৯০ শতাংশ আসনে জয় আসায় আমরা গর্বিত। বুথের কর্মীদের নিরলস প্রয়াসে এই ফলাফল সম্ভব হয়েছে। তঁারা নিজের বাড়িতে খেয়ে পকেটের টাকা খরচ করে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করায় এই ফলাফল হয়েছে।’
এভাবেই আগামী দিনেও কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। জেলার ২৫টি পঞ্চায়েত সমিতির সবক’টি এবার তৃণমূলের দখলে গেছে। এদিন শুভেন্দু অধিকারী জানান, গ্রামপঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মধ্যে সীমা থাকলে হবে না। এবার লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা বিরোধীশূন্য করতে হবে। তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। নির্বাচন হলে বিজেপি–সহ বিরোধীরা কুৎসা ছড়াতে থাকে। এই কুৎসার জবাব বারবার পাওয়ার পরেও ওরা লজ্জিত হয়নি।