মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে
ভারতের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে বলতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই লোকে গান্ধী, নেহেরু, নেতাজি, ভগত সিং এর বৃত্তেই বিচরণ করে। ইতিহাসের পাঠ্যবইও এর বাইরে জানার অবকাশ রাখে খুব কম। হাজার হাজার সেই বিপ্লবীদের নাম ইতিহাসের পাতায় হারিয়েই গেছে, যারা দেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে, মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রাণ দিতেও পিছপা হননি, ফাঁসির মঞ্চের দিকে স্মিতবদনে হেঁটে গেছেন দৃপ্ত কদমে, বন্দে মাতরম এর ধ্বনি যাদের কণ্ঠে ছিল বিরাজমান শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।
কলকাতা পুলিশকে এবং সর্বোপরি কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে বিনীত ধন্যবাদ জানাই এই বইটির জন্য। ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে চেনা অচেনা লালবাজার’ বইটার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে নিজের অজান্তেই চোখের কোণে পুঞ্জীভূত হচ্ছিল একরাশ দুঃখ, অশ্রুধারায় এই বীরবঙ্গজদের জানাচ্ছিল শ্রদ্ধা। ছোটবেলা থেকে স্কুলের বইতে গান্ধী, নেহেরু, ভগত সিং কে যতটা জেনেছি, ক্ষুদিরাম, বিনয়-বাদল-দীনেশ, কালাইলাল ভট্টাচার্য্য, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বীণা দাসদের জানা হয়নি ততটা। বাড়িতে মায়ের মুখে গল্প শোনাই সার। তাই এই বইটা পড়ে আত্মগ্লানিই বেশি অনুভব করেছি।
বাঙালি জাতি হিসেবে আমরা যথেষ্ট আত্মবিস্মৃত। নিজের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভাষা ফেলে মরীচিকার পেছনে ছুটে চলেছি ক্রমাগত। হিন্দি আগ্রাসনের মুখে জাতিগত এক সংকটের মুখে আমরা। সেমতাবস্থায় সুপ্রতিম বাবুর লেখা এই বইটা বাঙালি হিসেবে গর্ব করার আরও অবকাশ দিল। ওনার লেখনি যে কতটা তীক্ষ্ণ তা কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে রবিবারের রহস্য কলামের শেয়ার সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়। হায়, ইতিহাসের পাঠ্যবইগুলো যদি এরকম রোমহর্ষক হত।
‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’ – ছোটগল্প সম্বন্ধে একসময় বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৫০ পাতার এই বইটা শেষ হওয়ার পর মন চাইছিল আরও এরকম গল্প পড়তে। অবিভক্ত বাংলার গ্রামে গ্রামে যত ক্ষুদিরাম, প্রফুল চাকী কিংবা বিনয় গুপ্ত আছে, সবার কথা জানতে ইচ্ছে করছে। এই বই বাংলার স্কুলে স্কুলে আবশ্যিক পাঠ্য হয় উচিত।
ভিয়েতনাম থেকে সিরিয়া – সারা বিশ্বের নানা ঘটনাই এখন আমাদের নখদর্পণে, মুঠোফোনের সৌজন্যে। আর কতদিন নিজেদের ইতিহাসকে ভুলে থাকব?
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান?
লেখক: সুপ্রতিম সরকার
হার্ডকভার: ১৬৪ পাতা
প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার (২০১৮)
ভাষা: বাংলা
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )