জিএসটি এবং নোট বাতিল, কেন্দ্রীয় সরকারের এই জোড়া ধাক্কায়, শুরু থেকেই বেসামাল হয়ে পড়েছিল ছোট ছোট শিল্পক্ষেত্রগুলি। ভারতের অর্থনীতি সেই সব ‘আচ্ছে দিন’-গুলির ফল এখনও ভোগ করে চলেছে। আরবিআই সূত্রে খবর, এরই জেরে এবার ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র ব্যবসার ক্ষেত্রে ঋণখেলাপের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৭ সালের মার্চে এই ক্ষেত্রে ঋণখেলাপের বৃদ্ধির অঙ্কটা ছিল ৮,২৪৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬,১১৮ কোটি টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে করা আবেদনের জবাবে আরবিআই–এর দেওয়া তথ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের হাতে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র ব্যবসায় অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১৮–র মার্চে পর্যন্ত অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৮২,৩৮২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮,৫০০ কোটি টাকা। এই ঋণ অনাদায়ের চাপ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়েই পড়ছে বেশি।
২০১৬ সালের ৮ই নভেম্বর হঠাৎই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করেন। আচমকা নোট বাতিলের জেরে নগদের ঘাটতি দেখা দেয়। কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েন ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। প্রায় ২১ মাস পরেও তাঁরা ক্ষতি সামলে উঠতে পারেনি। ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক অ্যাসোসিয়েশন এবং বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপের সমীক্ষা রিপোর্টেও ক্ষুদ্র এবং অতিক্ষুদ্র ব্যবসায় ঋণের বহর বাড়ার তথ্য ধরা পড়েছে।
আরবিআইয়ের মানিটারি পলিসি ডিপার্টমেন্টের একটি বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ‘নোট বাতিলের পর থেকে বিশেষ করে স্বর্ণ ও রত্ন শিল্পের ঠিকাশ্রমিকরা পারিশ্রমিক নিয়মিত পাচ্ছেন না৷ জিএসটি চালু হওয়ায় বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করের আওতায় চলে আসায়, তাদের খরচ বেড়েছে৷ ফলে সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না৷’ দেখা যাচ্ছে, নোটবন্দীর আগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ছোট জেলাগুলির আর্থিকভাবে যে উন্নতি ঘটছিল, তা চরমভাবে ধাক্কা খেয়েছে৷ যার ফলে ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি ধুঁকছে, এমনকি মাঝারি শিল্পগুলিও নানা সমস্যার সম্মুখীন। জিএসটি ও নোট বাতিলের চক্করে আদতে বিপাকে পড়েছে সমস্ত ব্যবসায়ীরাই, যার প্রভাব পড়েছে এ বছরের ঋণখেলাপের অঙ্কতে।