শুরু থেকেই বামেদের গড় ছিল বর্ধমান। জেলা শহর থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত ছিল সমান আধিপত্য। কিন্তু এখন খেলা ভাঙার পালা। রাজ্য জুড়েই সিপিএমে ভাঁটার টান। বর্ধমানেও পড়েছে সেই ছাপ। ‘লালদূর্গ’ এখন ‘ভাঙা গড়’। দুই বর্ধমানেই দূরবীন দিয়ে খুঁজতে হয় সিপিএম-কে। দলাদলি, অবিশ্বাস, ভুল বোঝাবুঝিতে জেরবার বর্ধমান জেলা সিপিএম-কে সামলাতে প্রতি পদে দরকার হচ্ছে আলিমুদ্দিনের হস্তক্ষেপ। তারপরেও যে সমস্যা মিটছে তা নয়! পূর্ব বর্ধমান ছাত্র ফ্রন্টের সমস্যায় জেরবার। আবার পশ্চিম বর্ধমান শ্রমিক ফ্রন্টের দলাদলিতে নাকাল। সব মিলিয়ে বর্ধমান জেলা সিপিএম এখন অতীতের ছায়া মাত্র।
পশ্চিম বর্ধমানে দলাদলি তুঙ্গে। কোনও সমস্যাই মেটাতে পারছেন না স্থানীয় নেতারা। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে দূর্গাপুরের কেউ ঠাঁই না পাওয়ায় না-খুশ এলাকার নেতারা। ‘অবিচার’-এর বিহিত চেয়ে একেবারে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। আলিমুদ্দিন দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলেও এখনও কিছু করে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে আবার দূর্গাপুরেরই কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে দূর্নীতি এবং দলের খবর ফাঁসের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে আলাদা কমিশন বসেছে। সব মিলিয়ে কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই।
চাপের মুখে অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের তরফে ছাত্র ফ্রন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক। কিন্তু তারপরও কাজ করতে পারলেন কোথায়? ওই সময়েই ভাতার-১ কমিটিকে চিঠি দিয়ে সংগঠনের যাবতীয় দায়িত্ব ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন শ্রীজিত কোঙার। সমস্যা হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে আলিমুদ্দিন থেকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যকে জেলার সমস্যা মেটাতে বলা হয়েছে। চিন্তিত মুখে তিনি বলছেন, ‘সমস্যা না মিটলেও আলোচনা ছাড়া পথ নেই’।
পূর্ব বর্ধমানে মূলত অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিকদের সঙ্গে সুকান্ত কোঙার, সইদুল গোষ্ঠীর লড়াই। এই লড়াইয়ের ছাপ পড়েছে ছাত্র ফ্রন্টেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলবিরোধী পোস্টের জন্য শো কজ এবং সাসপেন্ড হয়েছেন এসএফআই জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর প্রাক্তন সদস্য সৌমেন কার্ফা। এরপরেই ছাত্র ফ্রন্টে ‘ভুল বোঝাবুঝি’র দোহাই দিয়ে চিঠি পাঠিয়ে অব্যাহতি চেয়েছেন মনসিজ হোসেন। অবশ্য দলের একাংশের অভিযোগ, বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতা চন্দন সোমদের থেকে আলাদা করতেই মনসিজকে ‘চাপ’ দিয়ে চিঠি লেখানো হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই বর্ধমানেই সিপিএমের অবস্থা সঙ্গীন।
জেলা বর্ধমানের কয়েকজন বাম নেতার কথায়, শুধু সময় নষ্ট ছাড়া কাজ হচ্ছে না কিছুই।