হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে ‘না’ বলে দিলেন জার্মান ফুটবল তারকা মেসুট ওজিল। রাশিয়া বিশ্বকাপ মঞ্চে অপমানজনক ব্যবহার হজম করতে পারেননি ২৯ বছর বয়সী ওজিল। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ক্ষোভ উগড়ে গিয়ে ওজিল জানালেন, এর পর আর জার্মানির জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামা সম্ভব নয় তার পক্ষে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে যায় ২০১৪’র বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ব্যর্থতার দায় গিয়ে পড়ে ওজিলের খাপার ফর্মের উপরে। তবে পারফরম্যান্স জনিত কারণে নয়, দলের মধ্যে ওজিল কোণঠাসা হয়ে পড়েন রাজনৈতিক কারণে।
জার্মান হলেও পারিপারিক সূত্রে তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত ওজিল। জার্মানিতে জন্ম হলেও ওজিলের বাবা মা তুরস্কের। সেই সূত্রেই ওজিলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এর্দোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে।বিশ্বকাপের ঠিক আগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতেই বেজায় চটে যায় জার্মান ফুটবল সংস্থা।
জার্মানির হয়ে খেলার আগে তুরস্কের হয়েও খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ওজিল। কিন্তু জার্মানিকে বেছে নিতে চান বলে তুরস্ককে না করে দিয়েছিলেন ২০০৬ সালে। এরপর ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ বিশ্বকাপ জেতেন তিনি। পরের বছর খেলতে যান বিশ্বকাপ। সেখানেই তারকাখ্যাতি জোটে, ২০১৪ বিশ্বকাপে জার্মানির সোনালী প্রজন্মের অংশও ছিলেন ওজিল। ২০১০ থেকে সবগুলো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে শুরু থেকেই দলে থাকলেও সুইডেনের বিপক্ষে এবারই প্রথম বাদ পড়েছিলেন দল থেকে। বিশ্বকাপে ওই একটা ম্যাচেই জিতেছিল জার্মানি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের ভাবমূর্তী জার্মান জনমানসে স্বচ্ছ না হওয়ায় ওজিলকে এমন কাজের জন্য তীব্র ভর্ৎসনা করে জার্মান ফুটবল সংস্থা। সমর্থকদেরও টিপ্পনি শুনতে হয় আর্সেনাল তারকাকে। সব মিলিয়ে রীতিমতো অপমানিত বোধ করেন ওজিল। সেই ক্ষোভ থেকেই অন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এরদোয়ানের সঙ্গে ছবি তোলা নিয়ে ওজিল টুইটারে জানান, “আমি একজন ফুটবলার। রাজনীতিবিদ নই। আমার কাজ ফুটবল খেলা। সুতরাং আমাদের বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক অভিসন্ধি ছিল না। তবে এই ঘটনার জন্য জার্মান ফুটবল সংস্থার কাছ থেকে যে রকম ব্যবহার পেয়েছি এবং আরো অনেকেই যেভাবে অপদস্ত করেছে আমাকে, তাতে জার্মানির জার্সি গায়ে চাপিয়ে আমার পক্ষে আর মাঠে নামা সম্ভব নয়।”
শেষে অভিমানেওজিল বলেন, নিজেকে নিতান্তই অবাঞ্ছিত মনে হচ্ছিল। আমার মনে হয় ২০০৯’এ আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর দেশের হয়ে আমার যাবতীয় অবদানের কথা সবাই ভুলে গিয়েছে। জাতীয় দলে এমন জাতিভেদ অত্যন্ত অপমানজনক। এই অপমান সহ্য করে খেলা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। খারাপ লাগছে জার্মানির হয়ে আর মাঠে নামব না ভেবে।
অভিমানেওজিল বলেন,“যখন আমরা জিতি তখন আমি জার্মান, কিন্তু যখন আমরা হারি তখন আমি অভিবাসী।”
ওজিলের দাবি, রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে জার্মানি বিদায়ের জন্য তাকে দায়ী করা হচ্ছে এবং তিনি অনেক ঘৃণামূলক বার্তাসহ ই-মেইল এবং হুমকিও পেয়েছেন।
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এখনও ওজিলের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কিছু জানায়নি।
ওজিল জার্মানির ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয়ে দারুণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জার্মানির হয়ে ৯২ ম্যাচে ২৩ গোল করা এই মিডফিল্ডার সমর্থকদের ভোটে ২০১১ সাল থেকে পাঁচবার জাতীয় দলের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।