মূল অভিযুক্তরা এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে, অথচ জেলে যেতে হল গণধর্ষিতাকে৷ এমনই অভিযোগ উঠেছে বিহারের আরারিয়া জেলায়৷ নিম্ন আদালতের এই নির্দেশের বিরোধিতা করে পটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি লিখলেন দেশের ৩৭৬ জন আইনজীবী৷ ওই নির্যাতিতার সঙ্গে অসংবেদনশীল ব্যবহারের অভিযোগ তুলে পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে ওই প্রতিবাদ পত্রে৷
এই খবর সামনে আসার পরই বিভিন্ন মহলে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়৷ পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে ইন্দিরা জয়সিং, প্রশান্ত ভূষণের মতো দেশের বিখ্যাত আইনজীবীরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এই ধরনের মামলা শোনার ক্ষেত্রে আরও ধৈর্যশীল হতে হবে আদালতকে৷ তরুণীর প্রতি বিচারক অতিরিক্ত কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন বলেও চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে৷ পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তরুণীকে জেলে রাখলে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হবে৷
এই চিঠি পাওয়ার পরই বুধবার বিকেলে আরারিয়া সেশন জজের কাছ থেকে মামলাটি নিয়ে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে পাটনা হাইকোর্ট৷ বৃহস্পতিবার থেকেই মামলাটির শুনানি শুরু হওয়ার কথা৷
কয়েকদিন আগেই বাইশ বছর বয়সি ওই তরুণী তাঁর এক পরিচিতের সঙ্গে মোটরবাইকে করে ঘুরতে বেরোন৷ অভিযোগ, ওই পরিচিতের চার বন্ধু মিলে তরুণীর উপর অত্যাচার শুরু করে৷ তরুণীকে একা ফেলে পালিয়ে যায় ওই পরিচিত ব্যক্তি৷ গণধর্ষণের পর আহত অবস্থায় তরুণীকে উদ্ধার করে জন জাগরণ সংস্থান নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা৷ তাঁরাই তরুণীকে উদ্ধার করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান৷ কিন্তু গণধর্ষিতা হওয়ায় তাঁর পরিবারের সদস্যরাও তরুণীর প্রতি বিরূপ মনোভাব দেখান৷ এর পরে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফেই তাঁর দেখভাল শুরু হয়৷ পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়৷
ঘটনার চার দিন পরে তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে আরারিয়া সেশন জজের কোর্টে এই মামলাটি ওঠে৷ অভিযোগ, তাঁর বয়ান অনুবাদ করার পর একটি কাগজে সই করতে বলা হয় নির্যাতিতাকে৷ কিন্তু তিনি দাবি করেন, তাঁর সঙ্গে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই সদস্যকে ওই বয়ান দেখাতে হবে৷ বিচারকের কাছেও একই দাবি করেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা৷ তা নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত৷ শেষ পর্যন্ত ক্ষোভে এবং হতাশায় আদালত কক্ষের মধ্যেই চিৎকার, চেঁচামেচি শুরু করেন ওই তরুণী৷ তাতে ক্ষুব্ধ ওই তরুণী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দুই প্রতিনিধির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেন বিচারক৷ এর পর তাঁদের প্রত্যেককে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে জেলে পাঠানো হয়৷