আর কয়েক দিন পরেই রথযাত্রা। শুরু হয়ে যাবে দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন। রথের দিন যেমন কাঠামো পুজো করে মায়ের প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়, সেরকমই আবহ ছিল ২১শে জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। উপলক্ষ – ২০১৯শের লোকসভা নির্বাচন। একদিকে বিজেপি সহ রাজ্যের বিরোধী দলগুলিকে আক্রমণ, অন্যদিকে দলের কর্মীদের শৃঙ্খলার বার্তা – অনুঘটকের ভূমিকায় ১০০-য় ১০০ প্রাপ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের বিজয়ী প্রার্থীরা যেমন এই বৈঠকে ছিলেন, তেমনই ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভার কাউন্সিলর, বিধায়ক, সাংসদ ও মন্ত্রীরাও। উলুবেড়িয়ার ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী – দলকে বিভিন্ন সময়ে বিব্রত করার ‘অপরাধে’ মুখ্যমন্ত্রীর রোষে পড়েছেন সব স্তরের নেতারা। বাঘা বাঘা মন্ত্রীদের জনসমক্ষে ধমক দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন দলের শৃঙ্খলার সাথে তিনি আপস করবেন না। দিদির এই মাতৃসুলভ ধমককে যে কর্মীরা অভিমানের নজরে দেখবেন না, বলাই বাহুল্য। এটাই পার্থক্য তৃণমূলের সাথে অন্য দলের।
তিনি রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। কিন্তু দল চালনার কাজেও যে তিনি সমান ভাবে সজাগ আজ নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠান থেকেই বোঝা যায়। পঞ্চায়েতের ফল বিশ্লেষণ করে, যেখানে দলের ফল খারাপ হয়েছে, সেখানকার স্থানীয় নেতাদের নাম করে করে তিনি সাবধানবাণী শুনিয়েছেন। এই পর্যায়ের আত্মসমীক্ষা আর কোনও রাজনৈতিক দল করে থাকে বলে আমার জানা নেই। জনসংযোগই যে রাজনীতির শেষ কথা সেই কথাও স্মরণ করিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে প্রায়শই শোনা যায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা। কড়া হাতে সেই ব্যাধি দমনে আজ উদ্যোগী হয়েছেন মমতা। জেলায় জেলায় আদি বনাম নব্য তৃণমূলের ঠান্ডা যুদ্ধ কিংবা যুব বনাম ‘মাদার পার্টি’র দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত – সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ মত ওষুধ বাতলে দিয়েছেন তিনি। ছাত্র পরিষদের টাকা তোলার অভিযোগই হোক বা ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্ব-সংকট – একের পর এক শাখা-সংগঠনগুলিকে ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শন করেছেন দিদি।
একদিকে যেমন ২০১৯কে মাথায় রেখে দলকে শৃঙ্খলাপরায়ণতার পাঠ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্যদিকে বিরোধীদের একহাত নিয়েছেন তিনি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাম-বাম-কংগ্রেস-মাওবাদীদের ‘মহাঘোঁট’কেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। কিন্তু তার বক্তৃতার ঝাঁঝ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ এখন বিজেপি। একদিকে ভুয়ো খবরের মাধ্যমে কুৎসা আর অন্যদিকে ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা – বিজেপির এই ঘৃণ্য রাজনীতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন মমতা। তাদের জঙ্গি সংগঠন বলতেও দ্বিধা করেননি।
সামনেই ২১শে জুলাইয়ের সমাবেশ। তার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আজকের বার্তা নিশ্চিতভাবেই দলের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করবে। আর বাংলা দখলের দিবাস্বপ্নে মগ্ন বিজেপির নেতারা (যারা আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে রাজ্য সভাপতির পদের জন্য প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বরত) একটু ঘুম থেকে উঠে কফির কাপের আঘ্রাণটা আত্মস্থ করুন (wake up and smell the coffee)।