দিল্লীতে ভাই বীর সিং মার্গে সিপিআই(এম) এর কেন্দ্রীয় দপ্তরের সামনে দুটো বড় বড় সাইন বোর্ড রয়েছে। লোকে যাতে বুঝতে পারে ওটা সিপিএম এর দপ্তর। যদিও দিল্লীর যে কোনো নির্বাচনে কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করা নেতা কর্মীদের থেকেও কম ভোট পায় সিপিএম। তবু দপ্তর চলে একদম কর্পোরেট কায়দায়। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে- বঙ্গ সিপিএম এর হেডকোয়ার্টারের সামনে অবশ্য কোনো সাইনবোর্ড নেই।পঞ্চায়েতের ফলাফল বেরোবার পর সাইনবোর্ড লাগবে কিনা তা কেউ জানেনা। লাগতেও পারে। কেননা বাংলার মানুষ বঙ্গ সিপিএম কে সাইনবোর্ডে পরিণত করবার কাজটা প্রায় শেষ করে এনেছেন।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বর্তমানে দণ্ডমুন্ডের কর্তারা প্রকৃত অর্থেই সবজান্তা। এই সবজান্তা বিপ্লবীদের হাতে পরে সিপিএম পার্টিটা লাটে উঠে যেতে বসেছে । পঞ্চায়েতের নির্বাচনে শোচনীয় ফলাফলের পরও আলিমুদ্দিনের কেষ্ট-বিস্টুদের কোনো হেলদোল নেই। পঞ্চায়েতে সিপিএম যখন হোয়াটওয়াশ হচ্ছে তখন রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর কয়েকজন বাছাই করা তাত্ত্বিক, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে শ্রেণী সংগ্রাম নিয়ে আলোচনা করেছেন। আসলে তত্ত্বের নিশ্চিন্ত ঘেরাটোপে থাকতে থাকতে আলিমুদ্দিনের কোটারি এটাই বুঝে উঠতে পারছেনা যে তাদের সাড়ে তিন দশকের দায়বদ্ধ সমর্থক কর্মীরাও তাদের ত্যাগ করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে আলিমুদ্দিনের কোটারি শ্লাঘা বোধ করতেই পারেন। কিন্তু গ্রামের প্রান্তিক মানুষ যে এই সর্বজ্ঞ নেতাদের বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাদের “কমরেড”এর মর্যাদা দিয়েছেন -এটা এরা বুঝেও বুঝছেন না। সাত বছরের বাস্তবতা গ্রামের প্রান্তিক মানুষকে এক অন্য অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছে। তারা দেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গরিবের পাশে দাঁড়ায়। দু টাকা কেজি দরে চাল গরিবের হাড়িতে ঢেলে দেয়। মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করে গ্রামের গরিব ছেলে মেয়েদের স্কুলে ফিরিয়ে আনে। সেই ছোট ছোট খালি পায়ে পরিয়ে দেয় জুতো। এই ছেলেমেয়েরা যাতে সারাদিনে অন্তত একটা সেদ্ধ ডিম খেতে পারে তার খেয়াল রাখে। পড়ুয়া মেয়েদের হাতে তুলে দেয় ঝকঝকে রঙিন সাইকেল। বিনা পয়সায় স্কুলের বইয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্যে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করে। পাশে দাঁড়ানো এই সরকারের এর প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাই লাল সেলাম জানাচ্ছেন উপকৃত প্রান্তিক মানুষ। এই সহজ সত্য ও বাস্তব মানবে না বলেই ধনুক ভাঙা পণ করেছে সিপিএম। বঙ্গ সিপিএম এর রাজনৈতিক লাইন হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসকে ও বিজেপিকে একসাথে হারাতে হবে।
। প্রশ্ন উঠছে এই লাইন কি প্রকৃতপক্ষে সোনার পাথর বাটির মতন নয়? এই অবাস্তব লাইনের হাত ধরেই সিপিএম পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। অধিকাংশ জেলায় সিপিএম একবারে সাইনবোর্ড। বিজেপির কাছে সিপিএম এর নিঃশর্ত আর্তসমর্পন বহু বামপন্থীরা মেনে নিতে পারছে না । অন্ধ মমতা বিরোধীতা করতে গিয়ে আলিমুদ্দিন এর কোটারি নেতারা মাওবাদীদের সাথেও হাত মিলিয়ে ফেলছেন। নিচের তলার সংগঠন উঠে গেছে সম্পূর্ণ ভাবে । রয়ে গিয়েছে একমাত্র উপরি কাঠামো। সেই উপরি কাঠামোর কর্তারা রীতি মেনে আচার পালন করে চলেছেন। গতে বাঁধা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি রীতি মাফিক হয়ে চলেছে । কিন্তু এই কর্মসূচি যে নিচেরতলার কর্মীদের উৎসাহিত করার বদলে আরো হতাশ করে তুলছে সেটাও “এক্সপাইরি ডেট” পেরিয়ে যাওয়া কোটারির তাত্বিকরা বুঝে উঠতে পারছেন না। নিচেরতলার কর্মীরা প্রকাশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছে -” দশ হাজার কর্মী নিয়ে কলকাতার রাজপথে মিছিলের চেয়ে গ্রামের বুথে বুথে দশ জন কর্মী নিয়ে মিছিল করা আরো ভালো”। “আন্দোলন” এ অংশ নিয়ে “গ্রেফতার” হয়ে লকআপ এ নেতা নেত্রীদের সেলফি তোলার হিড়িকে বিরক্ত হয়ে গিয়ে নিচুতলার কর্মীদের কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন -“নেতা নেত্রী সংগ্রামের নামে দাঁত কেলিয়ে সেলফি তুলবেন বিয়েবাড়ির দলবদ্ধ মেয়েদের মত নান পোজে ছবি তুলে ফেবুতে পোষ্টাবেন,বিশ্বাস করুন গ্রামগঞ্জের যে মানুষ গুলো ঝান্ডা আঁকরে বলি হল, তাদেরর পরিবারগুলো মনবল একটুও বৃদ্ধি পাবে না বরং তারা একটু একটু করে বিশ্বাস হারাবে সরে যেতে থাকবে.. সাম্প্রদায়িক দলের পতাকা তলে আশ্রয় নেবে.. তাদের কিচ্ছু পাওয়ার নেই, লড়াই করবার ভরসাও নেই..আর স্বৈরাচারী শাসক গত ৭ বছর ধরে যা করে চলেছে তাই করে চলবে..ওরা বুঝে গেছে এটা ৬৪-৭৭ -এর সংগ্রাম নয়..এট ২০১৮ এখানে সেলফি বিপ্লব চলে…জেলের দেওয়ালে লিখে..আত্মসমর্পণ বিদ্রোহের চেতনা বিক্রি করে দিয়ে..” । আসলে আলিমুদ্দিন এর কোটারি এখন একটি অচলায়তন। এই অচলায়তনে মুক্ত হওয়া এবং মুক্ত চিন্তার প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই অচলায়তনে বহুত্ববাদের কোনো জায়গা নেই। এই অচলায়তনে বিরুদ্ধ মতকে কোতল করা হয়। এই অচলায়তনে পছন্দ অপছন্দের শিকড় গভীরে প্রোথিত। রাজ্য জুড়ে এই অচলায়তনকে “বামপন্থী” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেঙে দিয়েছেন। আর অচলায়তন এর উপরি কাঠামোটা গুড়িয়ে দেওয়ার দাবি প্রকাশ্যেই তুলছেন সিপিএম এর তৃণমূল স্তরের কর্মীরা।
কৃতজ্ঞতা: খবর ৩৬৫ দিন