সারা বছর মানুষের জন্যে কাজ করার থেকে বিদেশযাত্রাতেই বেশি মন থাকে নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু লোকসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে, ততই ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে মানুষের কাছে আসার চেষ্টা করছেন মোদী। তাই বাজেট দিয়ে মানুষের মন টানতে চেষ্টা করলেও সফল হননি। তাই লোক দেখাতে এবার কুম্ভে গিয়ে সাফাইকর্মীদের পা ধুইয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এত খাটনিও সেই বৃথাই গেল। কারণ সাফাইকর্মীদের বড় অংশই তাতে আপ্লুত নন। তাঁদের বক্তব্য, সাফাইকর্মীদের এত ভাবলে তাঁদের মৃত্যুতে মোদী চুপ কেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি মোদী।
সাফাইকর্মীরা স্পষ্ট বলছেন, “সাফাইকর্মীদের প্রতি প্রধনমন্ত্রীর যখন এতই দরদ, তা হলে এখনও কেন সাফাইকর্মীদের সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে হাতে করে মল পরিষ্কার করতে হচ্ছে? কেনই বা ম্যানহোলে নেমে আবর্জনা সাফ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে সাফাইকর্মীদের মৃত্যু হচ্ছে”? সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বা ম্যানহোলে নেমে আবর্জনা সাফ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে শুধু ২০১৮-তেই ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের দু’মাসও যায়নি। তার আগেই মৃত্যুর সংখ্যা ১১ ছাপিয়েছে। সাফাইকর্মী আন্দোলনের জাতীয় আহ্বায়ক বেজওয়াড়া উইলসনের প্রশ্ন, ‘‘হাতে করে মল পরিষ্কার করা তো বেআইনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন এই প্রথা চলছে? প্রধানমন্ত্রী কেন গত পাঁচ বছরে এ নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি?’’
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ‘কর্মযোগ’ নামে একটি বই লিখেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। উইলসনের অভিযোগ, ‘‘ওই বইতে মোদী হাতে করে মল পরিষ্কার করাতে ‘আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। আমি ওঁকে অনুরোধ করছি, কোনও মল সাফাইকারীকে প্রশ্ন করে দেখুন, তিনি অন্য লোকের মল সাফ করাকে দূরদূরান্ত থেকেও আধ্যাত্মিক বলে মনে করেন কি না!’’
সাফাইকর্মীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর এই আচরণ অম্বেডকরের নীতির বিরোধী। কারণ অম্বেডকর বলেছিলেন, ঝাড়ু ছাড়ো, কলম ধরো
বিরোধীদের অভিযোগ, সাফাইকর্মীদের পা ধোয়ানোর পিছনে মোদীর লক্ষ্য ছিল দলিত ভোট। দলিত নেত্রী মায়াবতী বলেন, ‘‘ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী সঙ্গমে ডুব দিয়ে কি প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার পাপ ধুতে পারবেন? নোট বাতিল, জিএসটি, হিংসা, জাতপাত, মেরুকরণ, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন— এ সব ভুলে গিয়ে কি মানুষ বিজেপিকে ক্ষমা করবে?’’ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বরও বলেছেন, ‘‘নতুন নতুন পুজোর ধরন বার হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, একজন মহিলা সাফাইকর্মীর পায়ের নূপুর খোয়া গিয়েছে। তিনি এফআইআর করবেন”৷ সব মিলিয়ে মানুষের মন জয়ে ফের ব্যর্থ মোদী৷