কটক : মোদী সরকারের আমলে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে বারবার হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বিজেপি বা বিজেপি জোটশাসিত রাজ্যে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হচ্ছে বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকদের। মহারাষ্ট্র ও ওড়িশাই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এবার ‘ডবল ইঞ্জিন’ ওড়িশায় ফের ‘বাংলাদেশি’ তকমায় দাগিয়ে দেওয়া হল বঙ্গের আরও এক পরিযায়ী শ্রমিককে। তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। পরিচয়পত্র দেখালেও ছাড়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওড়িশা পুলিশের বিরুদ্ধে।
ধৃত শ্রমিকের নাম শেখ হানিফ আলি। জানা গিয়েছে, তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার বাসিন্দা। পেশায় কাঠের মিস্ত্রী হানিফ ওড়িশার কটকের বারাঙ্গা থানা এলাকায় কর্মরত। দীর্ঘ পাঁচ-ছয় বছর ধরে তিনি ওই এলাকার এক ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন। মাস কয়েক আগে তিনি চন্দ্রকাণার বাড়িতে ফিরেছিলেন। গত মাসে তিনি ফের ওড়িশায় ফেরেন। আর তারপরেই ওড়িশা পুলিশ বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁকে পাকড়াও করে বলে অভিযোগ। আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ড ওড়িশা পুলিশের কাছে দেখানো হয়েছিল। জানানো হয়, তিনি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। কয়েক পুরুষ ধরে চন্দ্রকোণাতেই তাঁদের বসবাস। তবুও ওড়িশা পুলিশ কোনও কথায় কর্ণপাত করেনি। হানিফকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁর পরিবার-পরিজনরা সদস্যরা জেলা প্রশাসন-সহ রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে এই বিষয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
হানিফের পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে, পরিচয়পত্র হিসেবে জমি-বাড়ির দলিল দেখাতে হবে। সেই দলিল কমপক্ষে পাঁচবছরের পুরনো হতে পারে। সেখানে শেখ হানিফ আলি-সহ তাঁর বাবার নামও থাকতে হবে। সেই কথা শুনে পরিবারের লোকজন জমি-বাড়ির দলিল সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কাগজপত্র নিয়ে ওড়িশা যাওয়ার কথাও মনস্থ করেছে ওই পরিবার। পরিচয়পত্র না পেলে বাংলাদেশে হানিফকে ‘পুশব্যাক’ করা হবে বলেও ভয় দেখানো হচ্ছে, এমনই অভিযোগ করেছেন ওই হানিফের ভাই রিয়াজ আলি।
স্বাভাবিকভাবেই উৎকণ্ঠায় রয়েছেন হানিফের স্ত্রী ও পরিবার। রাজ্য সরকার, পুলিশ-প্রশাসন তাঁকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য পদক্ষেপ নিক, এমনই চাইছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ একাধিক আধিকারিককে মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। চন্দ্রকোণার বিধায়ক অরূপ ধারা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে উপরমহলের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। শীঘ্রই হানিফকে বাংলায় ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।