নোটবন্দী দেশের অর্থনীতির ওপর ‘বিপুল ও সাঙ্ঘাতিক কঠোর অর্থনৈতিক আঘাত’। এর ফলে আর্থিক বৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় ৮ শতাংশ থেকে ৬.৮ শতাংশে নেমে আসে। এমনই মন্তব্য করলেন নরেন্দ্র মোদীর প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রক্ষণ্যম।
প্রায় চার বছর দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনের পর চলতি বছরের জুন মাসে পারিবারিক কারণে সরে যান অরবিন্দ সুব্রক্ষণ্যম। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের ঘোষণার পর নানা মহলে নানা কথা হলেও এতদিন উচ্চবাচ্য করেননি অরবিন্দ। এই প্রথম নোট বাতিল নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
আগামী ৫ ডিসেম্বর পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশ হতে চলেছে সুব্রক্ষণ্যমের সাম্প্রতিকতম বই ‘অফ কাউন্সেলঃ দ্য চ্যালেঞ্জেস অফ দ্য মোদী-জেটলি ইকনমি’। মোদী সমালোচকেরা বলেন, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দের পরামর্শ না নিয়েই নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। নতুন বইয়ে সেই ব্যাপারে কোনও উল্লেখ না করলেও ‘নোটবন্দী’র ওপর বরাদ্দ করেছেন একটা গোটা চ্যাপ্টার।
সেখানে সুব্রক্ষণ্যম লিখেছেন, ‘বিমুদ্রাকরণ মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়। এর জেরে বাজার-চলতি ৮৬ শতাংশ মুদ্রা তুলে নেওয়া হয়। মোট আভ্যন্তর উৎপাদন (জিডিপি) ধাক্কা খায়। বৃদ্ধির হার আগেও কম ছিল। কিন্তু নোটবন্দীর পর তা তলানিতে এসে ঠেকে। নোটবন্দীর আগের ষষ্ঠ ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৮ শতাংশ। নোটবন্দীর পর সপ্তম ত্রৈমাসিক বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ আসে’।
সুব্রক্ষণ্যমের লেখনীতে, ‘নোটবন্দীর জন্যই যে বৃদ্ধির হার কমেছিল তা নিয়ে কেউই সংশয় প্রকাশ করবেন না। কিন্তু কতটা কমেছিল তা নিয়ে কথা হতে পারে। ২ শতাংশ নাকি আরও কম, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। কারণ, ওই সময়ে প্রকৃত সুদের হার, জিএসটি-র বাস্তবায়ন এবং তেলের দাম সবই বৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছে। তবে এটাও ঠিক, এই ধরণের ধাক্কা অসংরক্ষিত ক্ষেত্রেই বেশী লাগে’।
নোটবন্দীর পর উৎপাদন বজায় রাখতে পরিচিতদের থেকে ধারকর্জ করেও কাজ চালিয়েছেন লোকজন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নোটবন্দীর প্রভাব পড়েছিল জানিয়ে সুব্রক্ষণ্যম বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনও দেশে স্বাভাবিক অবস্থায় এমন ঘটেনি। দেশে যুদ্ধ, মুদ্রাসঙ্কট বা রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে এমন হয়’। তাঁর কথায়, ‘ভারতে ব্যাপারটা একটু স্বতন্ত্র। নোটবন্দীর পর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে বিজেপি জিতেছে’। সুব্রক্ষণ্যমের ব্যাখ্যা, ‘এঁর অর্থ গরিব মানুষ কষ্ট মেনে নিতে তৈরি ছিলেন। তাঁরা জানতেন বড়লোকেরা তাঁদের অসৎ পথে জমানো সম্পদ নিয়ে আরও বেশী ফাঁপরে পড়বেন। ভাবটা এমন, আমি ছাগল হারালাম। কিন্তু তারা তাদের গরুগুলিকে তো হারাল। তাই বলে গরিবদের যে ক্ষতি হয়েছে তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন সুব্রক্ষণ্যম।
এর পাশাপাশি সুব্রক্ষণ্যম বলেন, ‘নোটবন্দীর মাধ্যমে আরও বেশী দেশবাসীকে করের আওতায় আনতে চেয়েছিল মোদী সরকার। কারণ করদাতাদের সংখ্যা বাড়লে বেশী কর আদায় হত রাজকোষে। নোটবন্দীর পর করদাতাদের সংখ্যা বাড়লেও সেই অর্থে কর আদায় বাড়েনি। অন্যদিকে, বাতিল নোটের প্রায় পুরোটাই (৯৯.২ শতাংশ) ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় ফিরে আসায় মাথায় হাত পড়ে গিয়েছিল কেন্দ্র সরকারের। বাস্তবে অর্থনীতির উন্নতিক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছুই হয়নি’।