সরকার এবং দলের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তিনি বরাবরই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন। কখনও রাজনৈতিক দল বা রঙ দেখে দোষীদের রেয়াত করেননি। এবার আবারও সরকারি এবং দলীয় কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যাদের টাকা তোলার মানসিকতা রয়েছে তাদের সঙ্গে সরকার ও দলের কোনও সম্পর্ক থাকবে না। সরকারের পাশাপাশি দলের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝাড়গ্রাম থেকে পুরুলিয়ায় এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকে জেলার উন্নয়নের কাজের খতিয়ান নেওয়ার পাশাপাশি তোলাবাজি নিয়েও সরব হন তিনি। তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজে এক পয়সাও নেওয়া যাবে না। সে যেই হোক না কেন। সরকারি প্রকল্প থেকে যে টাকা কেটে নেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রঘুনাথপুরের একটি কিষাণ মান্ডির কাছ থেকে তোলাবাজির অভিযোগ আসায় রঘুনাথপুরের ওসির কাছে এ বিষয়ে জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ সুপার জানান, ওই অভিযোগটি নিতুড়িয়া থানা এলাকার এবং এবিষয়ে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁর কাছে অভিযোগ পৌঁছনোর আগে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
জেলা পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঝাড়খণ্ড থেকে অনেকে আসছে। কেউ কেউ তোলাবাজি করেছে। কেউ আবার মাথায় ফেট্টি বেঁধে এলাকায় ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা করছে। বাঘমুণ্ডির ওসিকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাকে আরও স্ট্রং হতে হবে। এলাকার উপর নজর দিন, যাতে বাইরের লোক ঢুকতে না পারে। এরপর পুরুলিয়া সদর, মফস্বল, বলরামপুর, রঘুনাথপুর থানার ওসির কাছেও এলাকার বিষয়ে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কিষাণ ক্রেডিট কার্ড তৈরির কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রয়োজনে যেসব এলাকায় ব্যাঙ্কের পরিষেবা পৌঁছয়নি সেখানে কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ওই কাজ সম্পূর্ণ করার নির্দেশ দেন। এরপর পুরুলিয়া সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান তথা রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরিকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি ঠিক মতো সময় দেন কি না? বিধায়কের উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে তৎক্ষণাৎ কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁকে সরিয়েও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে পুরুলিয়া ও রঘুনাথপুর পুরসভার কাজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, পুরসভার কাজ শহর পরিষ্কার রাখা। শহর নোংরা দেখলে কেউ আসবে কী করে? আগে শহর পরিষ্কার রাখুন। রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান, পঞ্চায়েত ভোটে গণনার সময় বারবার ফোন করেও তাঁদের দু’জনকে পাওয়া যায়নি কেন? সাহসী না হলে তৃণমূল কংগ্রেস দল করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী।