কলকাতা : প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত উত্তর বাংলার একাধিক জেলা। বিপন্ন পাহাড়-সহ তরাই-ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বৃষ্টি ও ধসের কবলে পড়ে দার্জিলিং, সুখিয়া পোখরি, মিরিক, দুধিয়া এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা। এমতাবস্থায় আজ, সোমবার উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বেলা ৩টে নাগাদ পৌঁছবেন তিনি। বিপর্যস্ত এলাকা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবেন।
রাজ্য প্রশাসনের তরফে ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ-সহ ত্রাণ বণ্টন আরম্ভ হয়েছে। বিপজ্জনক এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাসিন্দাদের। উত্তরবঙ্গের একাধিক নদীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সেইসঙ্গে ভুটান পাহাড় থেকে নামছে জল। শনিবার রাত থেকেই পরিস্থিতি টানা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালীঘাটের বাড়ি থেকেই রবিবার দফায় দফায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে। নবান্নে চালু করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখানে দায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সঙ্গে সেচ সচিব মণীশ জৈন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা সচিব রাজেশ সিনহা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নবান্ন থেকে নজরদারি চালাচ্ছেন শীর্ষকর্তারা। পর্যটকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও পদক্ষেপ নিচ্ছে নবান্ন।

পাশাপাশি, পর্যটকদের জন্য পুলিশের তরফে চালু করা হয়েছে হেল্প লাইন নম্বর ( ৯১ ৯১৪৭৮ ৮৯০৭৮)। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবারই নবান্ন থেকে রওনা হয়েছে একটি বিশেষ প্রশাসনিক দল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের সচিবের নেতৃত্বে ওই দলে রয়েছেন কৃষি দফতরের সচিব, জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের সচিব-সহ একাধিক শীর্ষ আধিকারিক। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করবেন এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করবেন। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জেলাগুলিতে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও প্রবল বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলাকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। নিচু এলাকা ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে।
দুর্যোগ-পরিস্থিতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় রবিবার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাপ্লাবিত হওয়ায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কাল (শনিবার) রাত্রে উত্তরবঙ্গে কয়েক ঘণ্টার বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় এবং বাইরে থেকে নদীর জল আমাদের রাজ্যে বিপুল পরিমাণে এসে পড়ায় বিশেষত উত্তরবঙ্গে উদ্বেগজনক বন্যা-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
রাতে উত্তরবঙ্গে ১২ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি হঠাৎ-বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সংকোশ নদী এবং সাধারণভাবে সিকিম ও ভুটান থেকে বিভিন্ন নদীর বিপুল পরিমাণ জল এ-রাজ্যে চলে আসায় বন্যা-পরিস্থিতির অবনতি হয়। অকস্মাৎ এই বিপুল বৃষ্টিতে এবং নদীর বন্যায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কয়েকজন ভাই-বোনকে আমরা হারিয়েছি বলে খবর এসেছে। এই দুঃসংবাদে আমি আন্তরিকভাবে মর্মাহত। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গকে আমি আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। প্রত্যেক পরিবারের কাছে আমাদের সহায়তা অবিলম্বে পৌঁছে যাবে।”
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “জলের ভয়ংকর তোড়ে দুটি লোহার সেতু ভেঙে গেছে, প্রচুর রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিশেষত মিরিক, দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, মাটিগাড়া এবং আলিপুরদুয়ার থেকে আমাদের কাছে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। আমি গতকাল (শনিবার) রাত থেকেই পরিস্থিতির উপরে টানা নজর রেখেছি। ইতিমধ্যেই মুখ্যসচিব, পুলিশের ডিজি, উত্তরবঙ্গের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে সেই মিটিংয়ে ছিলেন গৌতম দেব ও অনিত থাপা।
আমি সর্বক্ষণ সকলের সঙ্গে যোগাযোগে আছি এবং এই সূত্রে আগামী কাল নিজেই মুখ্যসচিব-কে নিয়ে উত্তরবঙ্গ যাচ্ছি।”
মমতা এও বলেন, “ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের প্রতি আমাদের পরামর্শ, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। আমাদের পুলিশ আপনাদের উদ্ধার করে নেবে। এই উদ্ধার সংক্রান্ত খরচ আমাদের এবং পর্যটকদের এই বাবদ উদ্বিগ্ন না হবার জন্য অনুরোধ করছি। প্রাকৃতিক অবস্থানের জন্য মিরিকের মতো কিছু কিছু জায়গা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যদিও আরও অনেক এলাকা আমাদের নজরে আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সব খবর রাখছি, প্রয়োজনমতো নির্দেশ দিচ্ছি এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যবস্থা করছি। আমাদের অফিসার ও পুলিশ সর্বত্র ও সকল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কাছে সকল সহায়তা নিয়ে পৌঁছে যাবে।
রাজ্য সদর দফতর এবং জেলাগুলি ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম খুলে রাখছে। যে কোনও প্রয়োজনে আমাদের নবান্নে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করুন। টোল-ফ্রি নম্বর : ০০৯১-২২১৪-৩৫২৬/ ০০৯১-২২৫৩-৫১৮৫ / ৯১-৮৬৯৭৯-৮১০৭০/ ১০৭০।”




