ভোপাল : বাঁচাতে চেয়েছিলেন একজনকে। নিয়ে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। আর এই পরোপকারই যে ‘অপরাধ’ হয়ে দাঁড়াবে, তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি রাজেশ বিশ্বকর্মা। জীবনটাই বেঁকে গিয়েছে অন্য পথে। যেখানে এখন হতাশা ও অনিশ্চয়তার আঁধার। কেন হল এমন? উত্তর খোঁজেন রাজেশ। তা না পেয়ে দোষ দেন ভাগ্যকেই।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালের আদর্শনগরের বস্তির বাসিন্দা রাজেশ। অসুস্থ প্রতিবেশিনীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ‘অপরাধে’ ১৩ মাস জেল খেটেছেন তিনি। শেষমেশ আদালত তাঁকে নির্দোষ বলে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু ঘরে ফিরেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। ‘খুনি’ বলে কাজ দিতে রাজি নন কেউ।

ঘটনা গত ২০২৪ সালের ১৬ জুনের। পাশের বাড়িতে এক অসুস্থ মহিলা রাজেশের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। বলেছিলেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে। মানবিকতার খাতিরে মহিলাকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যান। কাজের শেষে রাজেশ সন্ধ্যায় হাসপাতালে গিয়েছিলেন রোগীর খবরাখবর নিতে। সেখান থেকেই গ্রেফতার হন। অভিযোগ, মহিলাকে খুন করেছেন রাজেশ!
পুলিশকে বহুবার বোঝাতে চাইলেও লাভ হয়নি। প্রথমে লক আপ, তারপর আদালত এবং কারাবাস। রাজেশের বাবা-মা নেই। জমি-বাড়ি নেই। বস্তিতে একা থাকতেন। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ৩৯৫ দিন পর বেকসুর খালাস পেয়ে রাজেশ জানান, ‘‘আমি তো শুধু অসুস্থ একজনকে সাহায্যই করেছিলাম। তার জন্য শাস্তি?’’
রাজেশ বলেন, ‘‘সে দিন প্রতিবেশী আমায় ডেকে বলেছিল, শরীর ভীষণ খারাপ। একা হাসপাতালে যেতে পারবে না। আমি যেন সাহায্য করি। আমিও একা থাকি। জানি, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কী অবস্থা হয়। ওকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কাজে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় খবর নিতে গিয়ে শুনলাম মারা গিয়েছে মহিলা। তার পর আমাকেই খুনের অভিযোগে জেলে ভরে দিল পুলিশ!’’
দাদার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজেশের বোন। তিনি বলেন, ‘‘দাদাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন বিকেলে আমায় কোর্টে যেতে বলা হয়েছিল। আমি বাড়িতে একা ছিলাম। যেতে পারিনি। সাত দিন পরে থানায় গেলাম দাদার আধার, মোবাইল নিতে। সে জন্য আমার কাছে ৫০০ টাকা চাইল পুলিশ। ওই টাকাও আমার কাছে ছিল না। দাদাকে এখন জেল থেকে ফিরেছে। কিন্তু কেউ ওকে কাজ দিচ্ছে না।’’
প্রসঙ্গত, রাজেশের হয়ে সওয়ালের জন্য আদালত যে আইনজীবীকে ঠিক করেছিলেন, সেই রিনা বর্মার কথায়, ‘‘ওঁর কাছে টাকা ছিল না। আদালত আমায় ওঁর হয়ে সওয়াল করতে বলেছিল। মামলা হাতে নিয়ে দেখলাম, আমার মক্কেল সম্পূর্ণ নির্দোষ। মৃতার নথিপত্র অনুযায়ী, তিনি দীর্ঘ অসুস্থতার জেরে মারা গিয়েছেন। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে, পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেনি। মেডিক্যাল রিপোর্টে বেশ কিছু খামতি ছিল। এমনকী, এটাও স্পষ্ট নয় যে ওই মহিলার ঠিক কী হয়েছিল এবং কিসের ভিত্তিতে রাজেশকে তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। শেষমেশ প্রমাণ করতে পেরেছি যে, উনি নির্দোষ।’’ এখন রাজেশের গলায় ধরা পড়েছে কেবলই আক্ষেপের সুর। তাতে মিশে আছে বেদনাও। ‘‘কী ভুল যে করলাম, এখনও বুঝতে পারলাম না। কে ফিরিয়ে দেবে আমার ১৩টা মাস? আমার মতো গরিবের জীবনের দাম নেই?’’, বললেন তিনি।




