কলকাতা: বাংলার কোচবিহারের বাসিন্দাকে এনআরসি নোটিস দেওয়ার ঘটনায় এবার ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সকালে এক্স হ্যান্ডেল পোস্টে তিনি এ বিষয়ে একহাত নিলেন বিজেপি সরকারকে। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ভারতবর্ষের সাংবিধানিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হলে, বাংলা চুপ করে থাকবে না।
জানা গিয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে কোচবিহার জেলার সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী ডাকযোগে একটি চিঠি পান। প্রথমে বুঝে উঠতে না পারলেও পরে তিনি বোঝেন গুয়াহাটি থেকে তাকে এনআরসির চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাতে আতঙ্কিত হয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন উত্তমকুমার ব্রজবাসী। এনআরসি নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে, ভেরিফিকেশনের জন্য আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁকে অসমের কামরুপে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে হাজিরা দিতে হবে। দেখাতে হবে ভারতীয় হওয়ার প্রমাণপত্র। কিন্তু উত্তমবাবুর দাবি, তাঁরা অসম থেকে এসেছেন ঠিকই। বংশ পরম্পরায় বাংলার বাসিন্দা। কেন আচমকা নতুন করে তাঁকে সেসব প্রমাণ দাখিল করতে হবে, তা বুঝতেই পারছেন না।
এই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে কোচবিহারের রাজনীতিতেও।
এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে লেখেন, ‘আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি জেনে যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, এনআরসি নোটিশ জারি করেছে। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে বিদেশি/অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে। এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো ক্ষমতা বা অধিকার নেই।’
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানো, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং নিশানা করার একটি পূর্বপরিকল্পিত নোংরা চক্রান্ত চলছে। এই অসাংবিধানিক আগ্রাসন জনবিরোধী এবং এটি বিজেপির বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক সুরক্ষাকে ধ্বংস করে বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে সমস্ত বিরোধী দলগুলির একজোট হওয়া এবং বিজেপির বিভাজনমূলক ও দমন পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি। ভারতবর্ষের সাংবিধানিক কাঠামোকে ধ্বংস করা হলে, বাংলা চুপ করে থাকবে না।’