কলকাতা : অতীতে বারবার বিভিন্ন সময় সাধারণ মানুষের উপর হেনস্থা ও অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে বিএসএফের বিরুদ্ধে। এবার ফের কাঠগড়ায় কেন্দ্রীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা।(BSF Jawan) ওপার বাংলায় অশান্তির আগুন লাগতেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারা কঠোর করার নির্দেশ এসেছিল। আর সীমান্ত সুরক্ষার সেই কড়াকড়ির জেরেই কার্যত নাজেহাল উত্তর ২৪ পরগনার হাকিমপুরের বাসিন্দারা।
Read More: সুরক্ষার নামে চলছে অবাধ হেনস্থা! কাঠগড়ায় বিএসএফ, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী
হাকিমপুর উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে। ওপারে রয়েছে যশোর জেলার ভাদিয়ালি গ্রাম। মাঝে বইছে সোনাই নদী।বিথারি-হাকিমপুর সীমান্ত চৌকি ঘিরেই সমস্যার সূত্রপাত। হাকিমপুর ও বিথারি গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পাহারার নামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ‘জিরো এরিয়া’ বা নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই চৌকিতে শরীর ও ব্যাগপত্র পরীক্ষার চূড়ান্ত বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছেছে। এলাকার স্কুল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বদলি নিয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে। বেহাল দশা ব্যবসারও। জোরপূর্বক চেকপোস্ট অন্যের জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে কলকাতা হাই কোর্টে মামলাও দায়ের হয়েছে। চলতি মাসেই সেই মামলার শুনানি হতে পারে।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, হাকিমপুর সীমান্তে যাবতীয় ঝামেলা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই। সেদেশে নতুন সরকার গঠন ও ভারত বিরোধিতার বাড়বাড়ন্তের জেরে সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় নজরদারি বহুগুণ বাড়িয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ১৪৩ নং ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা।(BSF Jawan) আর তারই ফলস্বরূপ জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে বলে বিথারি গ্রামবাসীদের অভিযোগ। অভিযোগ, চেকিংয়ের নামে বাড়াবাড়ির জেরে ভালো করে পালন করাই যায়নি ঈদের উৎসব।
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1937137188199969098
ইতিমধ্যেই বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সকাল থেকে রাত অবধি প্রশাসনের কাছে ভিড় জমাচ্ছেন সীমান্তের সাধারণ মানুষ। অভিযোগ গিয়েছে ডিএম, এসডিও, বিডিও, এসপি এমনকী মানবাধিকার কমিশনের কাছেও। এপ্রসঙ্গে স্বরূপনগরের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় জানান, ‘‘চেকিং নিয়ে গ্রামবাসীদের নিত্যদিনের অসন্তোষের অভিযোগ রয়েছে। সমাধান সূত্র খুঁজতে বিএসএফ আধিকারিকদের পাশাপাশি বিথারির ১০টি গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান, উপপ্রধান এবং স্থানীয় বিশিষ্ট মানুষজনকে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়েছিল। সেখানে কিছু বিষয় উঠে আসে। তা নিয়ে একটা রেজোলিউশন আনা হয়েছে। এখন কতটা সমাধান হয়, তা দেখা যাক।”
বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বছরভর গ্রামবাসীদের উপর চেকিংয়ের অছিলায় হেনস্থা চালায় তারা। ছাড় পান না গ্রামের মহিলা ও শিশুরাও। হেনস্থার শিকার হন বাইরে থেকে আসা সীমান্ত-লাগোয়া গ্রামগুলির বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। কলকাতা থেকে প্রতিদিন হাকিমপুর হাই স্কুলে পড়াতে আসায এক শিক্ষক ও শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ‘‘এটা রোজকার সমস্যা। বিএসএফ পরিচয়পত্র দেখে, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেও নিস্তার দেয় না। আড়ালে নিয়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা করে। স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়।’’
প্রসঙ্গত, বিএসএফের এহেন দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই এখানকার স্কুলগুলি থেকে বদলে নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, স্কুলব্যাগ থেকে জামা-কাপড় খুলিয়ে পড়ুয়াদের পরীক্ষা করা হয় বলে অভিযোগ! ফলত পড়ুয়ার সংখ্যাও দিন দিন কমছে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। জনৈক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, তাঁর মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে। স্কুল কিংবা প্রাইভেট টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার সময় সেই কিশোরীর সারা শরীরকে বিএসএফ পরীক্ষা নিরীক্ষার সামনে পড়তে হয়! শুধু তাঁর মেয়েই নয়, অন্য মেয়েদেরও এভাবে পরীক্ষা করা হয় বলে অভিযোগ। ‘‘এত পরীক্ষার পরেও আমাদের কপালে ‘স্মাগলার’ তকমা জোটে। হয়তো সীমান্তে পাচার হয়, তাই বলে সবাই তো আর পাচারকারী নয়!”, আক্ষেপের সুর সেই বাসিন্দার গলায়।