কলকাতা : বৃহস্পতিবারই বঙ্গ সফর শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর।(PM Modi) এদিন দুপুরে আলিপুরদুয়ারে সভা করলেন তিনি। আর সেই আবহেই প্রধানমন্ত্রীকে কড়া প্রশ্নবাণে বিঁধল তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, যখন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন কেন্দ্রের পাশে থেকেছেন, যখন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বভারতীয় প্রতিনিধি দলে থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী রূপ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন, বাংলায় এসে কুৎসা করার জন্য ঠিক সেই সময়টাকেই বেছে নিয়েছেন মোদী।
Read More: নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে ফায়ার অডিট, অগ্নিনির্বাপণ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত টাস্ক ফোর্সের
কুণালের কথায়, “এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর(PM Modi) সম্পূর্ণ রাজনীতি করতে আসার কারণ কী? আমরা টাইম নিয়ে প্রশ্ন তুলছি। সেই সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে আসছেন কেন? ভোটের আগে পরিযায়ী ভোট পাখিরা বাংলায় আসেন। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা খালি হাতে আসেন, ডেলি পেসেঞ্জারি করেন। ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা বাংলার পাওনা রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। ১০০ দিনের ৩৭০০ কোটি টাকা দেয়নি কেন্দ্র, আবাসের টাকা দেয়নি। বাংলা থেকে রাশি রাশি টাকা কর তুলে নিয়ে গিয়েছেন, সেই টাকাও দেননি প্রধানমন্ত্রী। এখন খালি হাতে আসছেন কেন? শুধু কথা বলতে, বাংলার সরকারের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কুৎসা করতে?”
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, “আমাদের সোজা কথা, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক বক্তৃতা করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সৌজন্য দেখিয়ে দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস দায়িত্ববান রাজনীতি পরিচয় দিয়েছে। দেশের পাশে থেকেছে। এই সময় দয়া করে আপনারা অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সেনাবাহিনীর লড়াইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না। দুই, বাংলার প্রাপ্য দিন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে আসছেন সেখানকার গরিব মানুষও ১০০ দিনের কাজের প্রাপ্য টাকা পাননি। তাই সস্তার রাজনীতির প্রচার করলেই বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। আমাদের সাফ কথা বাংলার টাকা বাংলাকে দিন। আমরা খুব স্পষ্টভাবে এই দুই দাবি সর্বসমক্ষে পেশ করলাম।”
Link: https://x.com/ekhonkhobor18/status/1928046325355909135
জাতিদাঙ্গায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠা মণিপুরের প্রসঙ্গও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কুণাল। “আজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই চলছে। এর মধ্যে বাংলায় কুৎসা করতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দু’বছরের বেশি সময় ধরে মণিপুর জ্বলছে, সেখানে তো গেলেন না প্রধানমন্ত্রী? পহেলগাঁওয়ের ওখানে যে সমস্ত গ্রাম বিধ্বস্ত পাক গুলি-গোলায়, সেখানে তো গেলেন না? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী বাংলায় আসছেন, আসার আগে আবার পোস্ট করে কুৎসা করেছেন”, সাফ জানান তিনি।
পাশাপাশি, তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা যখন সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে, আপনি বাংলায় আসছেন সংকীর্ণ রাজনীতি করতে। এটা কোন টাইমিং? প্রধানমন্ত্রী এই সফরে যদি বাংলা সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কুৎসা হয়, তাহলে তার জবাব যুক্তি তথ্য দিয়ে দেওয়া হবে। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার যে, যখন জঙ্গি হামলায় আমাদের এখানকার নিরীহ পর্যটকরা মারা গিয়েছেন, সেনা শহিদ হয়েছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে আসছেন রাজনীতি করতে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন, আমরা দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে আছি, সোনার পাশে আছি।”
প্রধানমন্ত্রীকে ‘পরিযায়ী পাখি’ বিশেষণেও অভিহিত করেছেন কুণাল। “আমরা শহিদতর্পণ করব, সেনাদের সম্মান জানাব একসঙ্গে, কোনও রাজনৈতিক ভেদাভেদ থাকবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বিশেষ অধিবেশন ডাকুন সংসদে। সবার জানার অধিকার রয়েছে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরবর্তী ঘটনাবলী। তা না করে রাজ্যে এসে সংকীর্ণ রাজনীতি করছেন। ২০২১ সালে যা করেছেন, ২০২৪ সালে যা বলেছেন, আবারও পরিযায়ী পাখির মতো আচরণ করছেন। আমাদের আবেদন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে তাঁর বক্তৃতায় রাজনৈতিক ফায়দা তোলার মতো সংলাপ যেন না থাকে। বাংলার যে পাওনা তা যেন মিটিয়ে দেওয়া হয়। আমরা জনসমক্ষে তার পেশ করে রাখলাম”, জানান তিনি।