কথায় আছে বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা এবং পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা। কিন্তু সে তো অপরাধ সংঘটিত হলে। এমনিতে বারবারই সামনে এসেছে বাংলার পুলিশের মানবিক মুখ। এবার যেমন ভিক্ষা করে দিন গুজরান করা দুই নাবালক ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত!
জানা গিয়েছে, সকালে বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, ভিক্ষা করছে দুই নাবালক ভাই। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রসেনজিৎবাবু জানতে পারেন, স্কুলে গেলে বাড়িতে কারও পেট চলবে না। তাই ওদের মা ভিক্ষা করতে পাঠিয়েছে! এর পর আর স্থির থাকতে পারেননি তিনি। দু’জনকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যান। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রসেনজিৎবাবু তাঁদের জানিয়ে দেন, দুই নাবালকের লেখাপড়ার খরচ এখন থেকে তাঁর! তাই দু’জন এ বার রোজ স্কুলেই যাবে। পুলিশ আধিকারিকের এই মানবিক আচরণে মুগ্ধ ভাতারের বলগোনা।
পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই নাবালককে দেখতে পেয়েই গাড়ি থেকে নেমে তাদের কাছে যান ওসি। তাদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। জানতে চান কেন তারা এই কাজ করছে। দুই নাবালক ওসিকে জানায়, তাদের নাম ইসমাইল শেখ ও আশরাফিল শেখ। বাড়ি সন্তোষপুর গ্রামে। বাবা শেখ আশরোফ শারীরিক ভাবে অক্ষম। কাজে নেই তাঁর। ঘরে বসা। মা কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। যা রোজগার হয়, তাতে সংসার চলে না। তার মধ্যে পড়াশোনা! পেট চালাতে তারা বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছে। এর পরেই পাশের মুদিখানা দোকান থেকে কিছু জিনিসপত্র কিনে দুই নাবালকের বাড়িতে যান প্রসেনজিৎ।
তাদের মা চম্পা বিবির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁকে ওসি জানান, ইসমাইল আর আশরাফিলের পড়াশোনার দায়িত্ব তিনি নেবেন। দু’জনকে খাতাপেনও কিনে দিয়েছেন ওসি। পাশাপাশি দুই নাবালকের মা যাতে মাসে বাড়তি কিছু রোজগার করতে পারেন, সেই বিষয়টিও দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। চম্পাও জানান, তাঁর স্বামী শারীরিক ভাবে অক্ষম। জমি বিক্রি করে কোনও রকমে ঘর করতে হয়েছে তাঁদের। কিন্তু এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। চম্পার কথায়, ‘লোকলজ্জার মাথা খেয়ে ছেলেগুলোকে ওই কাজে নামিয়েছিলাম। বড়বাবু (প্রসেনজিৎ) যে আশ্বাস দিয়ে গেলেন তাতে ওদের আর ওই কাজে পাঠাব না। পড়াশোনা করাব।’