গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের পথে হাঁটল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার সেতুগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ আরও নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হল রাজ্য পূর্ত দফতর। নিয়মিত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি এবার প্রতিটি সেতুর বহন ক্ষমতা, উচ্চতা, রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিবরণের বিস্তারিত তালিকা-সহ ফলক বসাতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্যের পূর্ত সচিব অন্তরা আচার্য এই মর্মে এক নির্দেশিকা জারি করেছেন। তা অনুযায়ী, পূর্ত দফতরের নিয়ন্ত্রনাধীন সেতু, রেল ওভারব্রিজ ও রাস্তার ওই সব তথ্য অন্ধকারেও দেখা যায় এমন ফলক বসাতে হবে। যেখানে ওই সেতুর সর্বাধিক ভারবহনের ক্ষমতা, ভারবাহি গাড়ির অনুমোদিত বহনের ক্ষমতা, সেতুর ওপর যানবাহনের অনুমোদিত সর্বাধিক গতি ইত্যাদি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। একইসঙ্গে সেতুর নাম, নির্মাণের তারিখ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নামও সেখানে উল্লেখ করতে হবে। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কোনওরকম অভিযোগ থাকলে তা যাতে সহজেই জানানো যায় সে কারণে ফলকে সংশ্লিষ্ট তথ্যসহ কিউআর কোড বসাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেতুর দুই প্রান্তেই বসাতে হবে এই ধরনের ফলক।
পাশাপাশি, দফতরের প্রত্যেকটি জোনের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়মিত সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য সমীক্ষা পোর্টালে তুলতে বলা হয়েছে। ছোট বড় সমস্ত সব রকম সেতু, যেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের তাদের তথ্য ওই পোর্টালে থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে। মাঝেরহাট সেতু-বিপর্যয়ের পরই রাজ্যের প্রতিটি সেতু, উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরিকল্পনা নেয় পূর্ত দফতর। দেশের নামজাদা চারটি সমীক্ষক সংস্থাকে এই কাজে নিয়োগ করা হয়। কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকার ১৬টি সেতুর সমীক্ষার কাজ শেষ করে রাজ্যকে রিপোর্ট দিয়েছে ব্রিজ বিশেষজ্ঞ কমিটি। বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে পূর্ত দফতরের অধীন ৩৭২টি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সেতুর রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে ২২৩টি ব্রিজের ছোটখাটো মেরামতের প্রয়োজন এবং ক্ষেত্রে ২৭টি সেতুকে ‘বিপজ্জনক’ হিসাবে চিহ্নিত করে সেগুলি ভেঙে নতুন করে গড়ে তোলার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। এই ‘বিপজ্জনক’ সেতুগুলির মধ্যে বীরভূম, মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি সেতু ছাড়াও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি সেতুও ছিল তালিকায়। সেই মতো ধাপে ধাপে সেতু সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়া চলেছে। কিন্তু ফের যাতে ওইসব সেতু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দুর্বল না হয়ে পড়ে, তা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।