এক ঘন্টা নয়। দুই বা চার ঘণ্টা নয়। নয় ২৪ ঘণ্টাও। ট্রেন দেরি করল পাক্কা আড়াই দিন! হ্যাঁ, শুনতে অবাক হলেও সত্যি। কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম থেকে ট্রেনটি ছেড়েছিল ২৮ অক্টোবর, বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে। হাওড়ার অদূরে শালিমার স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিল ৩০ অক্টোবর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে। কিন্তু তিরুবনন্তপুরম সেন্ট্রাল সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস হাওড়ার অদূরে সাঁতরাগাছিতে পৌঁছয় ২রা নভেম্বর, বুধবার বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে। অর্থাৎ ৪৩ ঘণ্টার জায়গায় গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় নেয় ৯৬ ঘণ্টা। সকলেই একবাক্যে মানছেন, সাম্প্রতিককালে আড়াই দিন লেট করার নজির কোনও ট্রেনের নেই। তবে রেল জানিয়েছে, চারদিন আগে অন্ধ্রপ্রদেশের রেল দুর্ঘটনার জেরে দেরিতে চলছে অনেক ট্রেনই। রেলের অনেকেই আবার এই বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ২৯ অক্টোবর অন্ধ্রপ্রদেশে যে ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে তাতে সময়ে এক-দেড় দিনের মতো লাইন ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা। বাস্তবে তা হয়নি। তার জেরে হাওড়াগামী ওই ট্রেনটির মতো বহু ট্রেনকে অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করতে হয়। কোনও স্টেশনে আবার অপেক্ষা করতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
উল্লেখ্য, অস্বাভাবিক বিলম্বের বিষয়টি রেল কর্তারাও অস্বীকার করতে পারছেন না। তিরুবনন্তপুরম সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসটি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে রেলের ইস্ট কোস্ট জোন ধরে। ওই জোনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ট্রেনটির অস্বাভাবিক বিলম্বের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলকাতায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক অফিসার বলেন, আমাদের জোনে ট্রেনটি প্রবেশ করা মাত্র সেটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যাতে আরও বিলম্ব না হয়।” এই জোনের অধীনে আসার আগেই অবশ্য বাচ্চা ও বয়স্কদের নিয়ে সমস্যায় পড়েন সহযাত্রীরা। অনেক বাচ্চা ও প্রবীণ যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকজনের পেটের অসুখ দেখা দেয়। উত্তর কলকাতায় পাইকপাড়ার বাসিন্দা চিত্রা আগরওয়াল সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “কেরলে স্বপ্নের সফর উপভোগ করেছি। আর কলকাতায় ফেরার পথে ট্রেনের অভিজ্ঞতা এক দুঃস্বপ্ন।” চিত্রার সঙ্গে ছিলেন স্বামী এবং চার ও ছয় বছর বয়সী পুত্র ও কন্যা। যাত্রীরা জানান, নরসিপট্টনম স্টেশনে প্রায় একদিন দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল ট্রেনটিকে। কেসি ফিলিপ নামে এক যাত্রীর অনুযোগ, ট্রেনটি যাত্রা বিলম্ব, রুট বদলের ব্যাপারে যাত্রীদের রেল আগাম কিছু জানায়নি। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝতে পারেন অনলাইন খবরের সূত্রে। এরপর বিলাসপুর স্টেশনে নেমে স্টেশন ম্যানেজারের অফিসে প্রবল বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা।