কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে মণিপুরে কিছুতেই নিভছে না হিংসার আগুন। আবারও নতুন করে অশান্তি দানা বেঁধেছে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার শাসিত এই রাজ্যে। মঙ্গলবার ভোরেই বিদ্রোহীদের একটি দলের সঙ্গে সংঘর্ষে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এক জওয়ানের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ হন অসম রাইফেলস-এর দুই কর্মীও। আর এবার ইম্ফল পশ্চিমের ইরোইসেম্বা এলাকায় ল্যামফেল থানা অঞ্চলে গুলিবিদ্ধ হল ৭ বছরের শিশু! মা-সহ ৩ জনকে অ্যাম্বুল্যান্সে পুড়িয়ে মারল জঙ্গিরা! জঙ্গিহানায় তিনজনই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। একটাই অ্যাম্বুলেন্সে তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর সেই অ্যাম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক টুকরো হাড় ছাড়া তিনজনের দেহের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এমন নৃশংসতা ঘটেছে পুলিশের সামনেই।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীরা মৈতৈইদের জঙ্গি গোষ্ঠীর লোক। ঘটনাটি গত রবিবার রাতের। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসন ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানায়নি। নিহতদের পরিবার এবং স্থানীয় মানুষ এই ঘটনা নিয়ে সরব হওয়ায় অনেক পরে জানাজানি হয়েছে। নিহতরা হলেন টনসিং হ্যাংসিং (৭), তার মা মীনা হ্যাংসিং (৪৫)। মীনা নিজে মৈতৈই হলেও তাঁর স্বামী কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ। নিহত তৃতীয় ব্যক্তি মীনার আত্মীয় লিডিয়া লোরেম্বামও (৩৭) একজন মৈতৈই খ্রিস্টান৷ উল্লেখ্য, মণিপুরে জাতি দাঙ্গায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ বিপুল সংখ্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। হামলা হয়েছে বহু চার্চে। সেখানে সংঘর্ষে লিপ্ত মৈতৈই সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অন্যদিকে, আদিবাসী কুকিদের অনেকেই খ্রিস্টান।
সূত্রের খবর, রবিবার রাত সাতটা-সাড়ে সাতটা নাগাদ ইম্ফল পশ্চিমের ইরোইসেম্বা এলাকায় মৈতৈই সম্প্রদায়ের হাজার দুই মানুষ হামলা চালায়। এলোপাথাড়িগুলি চলে। পাল্টা জবাব দেয় কুকিরাও। হামলায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হলে পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে। পুলিশ এসকর্ট থাকা সত্ত্বেও হামলাকারীরা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ইরোইসেম্বার এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেও তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে। এলাকাটি মিশ্র বসত এলাকা। কুকি এবং মৈতৈইদের গ্রাম পাশাপাশি। সেই কারণে ৩ মে গোলমাল শুরুর পর থেকে এলাকায় অসম রাইফেল্সের ক্যাম্প বসানো হয়। তারপরও কেন হামলা ঠেকানো গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের অন্দরে। পুলিশ কেন হামলাবাজদের ঠেকাতে পারল না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।