বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বিরোধীদের চুপ করাতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি-পুলিশ লেলিয়ে দেয় বিজেপি। বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। এবার যেমন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার বাড়িতে সিবিআই হানা দিয়েছে। পাশাপাশি, আরও ২১টি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে তারা। অন্যদিকে, আবার আপ সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনকে জেলে পুরেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ দায়ের করেছে ইডি। তাঁর অফিস, বাড়ি তল্লাশি করে বিপুল টাকা উদ্ধার করেছে ইডি।
আপের আশঙ্কা এবং দিল্লীর রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ইডি-সিবিআই এরপর কড়া নাড়তে পারে মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাড়িতেও।
প্রসঙ্গত, দিল্লীর আপ সরকারের নয়া আবগারী নীতি ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন দিল্লির উপ রাজ্যপাল বিনয় কুমার সাক্সেনা। যে আবগারী নীতি নিয়ে মনীশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটি মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে এবং তার আগে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল তাতে সিলমোহর দেন। অভিযোগ, নতুন আবগারী নীতি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে দিল্লীর মদ ব্যবসায়ীরা বিপুল টাকা বাড়তি মুনাফা করেন। মুনাফার একাংশ তারা আপের দলীয় তহবিলে দিয়েছে। সেই কালো টাকাই আপ পাঞ্জাবের বিধানসভা ভোটে ব্যয় করেছে। উপ রাজ্যপাল সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর দিল্লী সরকার নতুন আবগারী নীতি বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু তদন্ত বহাল আছে।
সরকারি সূত্রে খবর, উপ রাজ্যপাল সাক্সেনা দিল্লীর পরিবহণ দফতরের বাস কেনা সংক্রান্ত ফাইল খতিয়ে দেখছেন। অভিযোগ, বাস কেনাতে বিপুল টাকা কমিশন নেওয়া হয়েছে। দিল্লীর বেসরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিকেও বিপুল টাকা লাভের সুযোহ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আপ সরকারের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি দিল্লী জল নিগমের লোকসানের মুখে পড়ার পিছনেও রয়েছে আপ সরকারের দুর্নীতি, এমনই অভিযোগ করছে বিজেপি। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার প্রশ্ন ওঠে না। যে কারণে, ইউপিএ আমলে টুজি এবং কয়লা কেলেঙ্কারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নাম জড়িয়েছিল। কারণ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ফাইলে মনমোহনেরও সই ছিল।
বিজেপি সূত্রের খবর, ইডি-সিবিআই হানার পাশাপাশি দিল্লীতে তারা আপ সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাঞ্জাব জয়ের পর গুজরাত ও হিমাচলপ্রদেশের বিধানসভা ভোট নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে আপ। দুই রাজ্যেই তারা বিজেপি সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসন নিয়ে সরব। গুজরাতের ভোটে দলের দায়িত্বে স্বয়ং আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। গত ছয় মাসে ছয়বার গুজরাতে প্রচার গিয়েছেন তিনি। আপের সভায় ভাল ভিড়ও হচ্ছে। পাঞ্জাবের পর গুজরাত ও হিমাচলেও কেজরিওয়ালের হাতিয়ার দিল্লীর সরকারের সাফল্য। এই পরিস্থিতিতে আপের ওপর চাপ বাড়াতে কেন্দ্রের অঙ্গুলি হেলনে দিল্লীর রাজ্যপাল আপ সরকারের আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। এই সব তদন্ত সূত্রে কেজরিওয়ালের দরজাতেও কড়া নাড়া অসম্ভব নয় ইডি-সিবিআইয়ের।