আশা-কর্মী। স্বাস্থ্য ভল্যান্টিয়ার। মুখে মুখে যাঁদের নাম ঘোরে। হাত বাড়ালেই যাঁরা বন্ধু। তাঁদের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গ্লোবাল হেলথ লিডার্স, হু-র এই সম্মান তারা পেয়েছে। ভারতের ১০.৪ লক্ষ আশাকর্মীর মুকুটে এর ফলে হু-র এই পালক ঝকমক করছে এখন, কিন্তু অর্থের ভুবন তাঁদের অন্ধকার। খালি পেটে কি স্বাস্থ্য-ধর্ম পালন করা যায়, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। এত কিছু করে ঠিকঠাক বেতন কি আশা করা যায় না, আশা-কর্মীদের এমনই আশা। যে আশা এখন বিক্ষোভও।
শুশ্রূষায় নারীদের দক্ষতাকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা যেমন রয়েছে, তেমনই তাঁদের অর্থিক ভাবে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর লক্ষ্য রয়েছে এই আশা-য়। কিন্তু তাঁরা যখন সম্মান পাচ্ছেন বিশ্বের দরবারে, তখনও তো ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন পারিশ্রমিক বৃদ্ধি, নিয়মিত কাজ এবং স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে। গত সেপ্টেম্বর থেকে এই দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভে তাঁরা পথে পথে।
আশা-কর্মীরা ভল্যান্টিয়ার, বেতনভুক নন। এ ব্যাপারে কোনও দায়বদ্ধতা বা বাদ্ধবাধকতাও নেই সরকারের। বেশির ভাগ রাজ্যই এই পথে হাঁটে না। তাঁদের পারিশ্রমিক বিভিন্ন প্রকল্পের ইনসেন্টিভ থেকে আসে। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা প্রতি মাসে এক এক জন আশা-কর্মী পেয়ে থাকেন। এত কম অর্থে তো নুন আনতে পান্তা ফুরানো আটকানো যায় না, স্বাভাবিক জীবন চলে না। বলছিলেন এক আশা-কর্মী। সারা দিন কাজ করলেও সব কাজ শেষ হয় না। কোনও নির্দিষ্ট বেতন নেই, কোনও স্বাস্থ্যবিমা নেই। হু সম্মান দিচ্ছে। সরকার বীরাঙ্গনা বলছে। কিন্তু সেই বীরাঙ্গনাদের ঠিক মতো আর্থিক সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। এই হচ্ছে তাঁদের সমস্বর। তা ছাড়া, উঠেছে স্থায়ীকরণের দাবিও।
আশা-কর্মীর স্বাভাবিক আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলি না মেটানো হলে ক্ষোভবিক্ষোভ থামবে না, পুরস্কারে কাজ হবে না। স্পষ্ট ইঙ্গিত এমনই। মহামারিতে আশা-কর্মীদের যেমন প্রাণঢালা, জীবনপাত করে কাজ করতে দেখা গিয়েছে, তাতে অর্থের দরজাটা কেন খুলছে না, তাতেই অবাক অনেকে। তা ছাড়া, মহামারিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, স্বাস্থ্যবিমা এই সব কর্মীদের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক পুরোদস্তুর।