একুশের ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে চলছে মুষল পর্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, কলকাতায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের নেতৃত্বে বৈঠক, বনগাঁয় চড়ুইভাতি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ, লোকাল ট্রেন থেকে কলকাতার রাজপথে পোস্টার— নানা ভাবে দলের একাংশের বিরুদ্ধে সরব দলেরই অন্য অংশ। আর এই অন্তর্কলহের ফলস্বরূপ রাজ্যের আসন্ন পুরভোটে বহু ওয়ার্ডেই প্রার্থী দিতে পারেনি বিজেপি। এ নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। রয়েছে সংশয়ও। দলের একাংশের অভিমত, সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণেই বহু আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। শুধু সন্ত্রাসের তত্ত্বকে খাড়া করা ঠিক নয়। তাহলে হাতেগোনা কয়েকটি পুরসভা নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও, সিংহভাগ পুরসভায় কীভাবে প্রার্থী দিয়েছে দল, প্রশ্ন বিজেপির ওই অংশের। পাশাপাশি একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ক’টা আসনে প্রার্থী দেওয়া গেল, রাজ্য বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয়ভাবে সেই পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়নি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের ১০৮টি পুরসভার মধ্যে কয়েকটি পুরসভা ও বেশ কিছু আসনে প্রার্থীদের নামের তালিকা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত চূড়ান্ত ছিল না বলে বিজেপি সূত্রে খবর। রাজ্য বিজেপির তরফে দাবি করা হয়েছিল, ২২৭২টি আসনের প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করে জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও শেষমুহুর্ত পর্যন্ত সব পুরসভার প্রার্থী তালিকা পার্টির তরফে জানানো হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, যেখানে দলের সংগঠন দুর্বল সেখানে আদৌ দল প্রার্থী দিতে পেরেছে কী না। বিজেপির একাংশের দাবি, একুশের বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর থেকেই দলের নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ নিষ্ক্রিয়। তারপর একাধিক উপনির্বাচন, কলকাতা পুরভোটে দলের ধরাশায়ী হওয়া। ফলে বহু জায়গায় প্রার্থী খুঁজতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দলকে।
আবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা মাত্র খড়গপুর-মুর্শিদাবাদে তুমুল বিক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জেও প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ ছিল। অন্যদিকে, কৃষ্ণনগরে দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। প্রার্থী না দিতে পারা নিয়ে দলের একাংশ একাধিক প্রশ্ন তুলেছে। এক, বহু জায়গায় বিজেপি প্রার্থী দিতে না পারলেও বামেরা প্রার্থী দিয়েছে। আবার বোলপুর, দিনহাটা, বজবজ, সাঁইথিয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বাকি পুরসভা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই কেন? দুই, বহু জায়গায় বিজেপির বুথস্তরে কোনও সংগঠন নেই। দলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয়। সেরকম বেশ কিছু জায়গায় প্রার্থী দিতে পারেনি পদ্মশিবির। তিন, বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় তো পঞ্চায়েত ও পুরসভার বহু আসনে বিরোধীদের প্রার্থী ছিল না। সেকথা ভুলে শুধু রাজ্যে সন্ত্রাসের তত্ত্বকে খাড়া করা ভুল। চার, দলের নিচুতলায় বহু জায়গায় সংগঠনের হাল এতটাই খারাপ যে আসন্ন পুরভোটে একাধিক বুথে এজেন্ট খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।