রাজ্য সরকারের সঙ্গে বরাবরই অহি-নকুল সম্পর্ক তাঁর। বিভিন্ন সময়েই টুইটে রাজ্য সরকারের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। পুরভোটের দিনেও টুইটে ঝড় তুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। টুইট করে তিনি স্পষ্ট করে জানান, “সংবিধানের ১৭৪ (২)-এর অনুচ্ছেদের অধীনে ১২ই ফেব্রুয়ারি অধিবেশন সমাপ্ত করা হচ্ছে।” রাজ্যপালের ঘোষণা ঘিরে কার্যত বিতর্ক শুরু হয়। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজ্যের বিরোধী নেতৃত্ব। এ বার, রাজ্যপালের এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মমতা-সরকারের কার্যত সমর্থনে টুইট করলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। তাতে তিনি লেখেন, ” রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন সমাপ্তির কথা যেভাবে ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল তা তাঁর মতো সাংবিধানিক পদকর্তার থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত। নীতিবিরুদ্ধও বটে। তাঁর থেকে এমন আচরণ আশা করা যায় না।”
উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর টুইট। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে স্ট্যালিনকে মমতার পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে। কিছুদিন প্রজাতান্ত্রিক দিবসে ট্যাবলো বিতর্কেও কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একযোগে প্রতিবাদ করেছিলেন মমতা ও স্ট্যালিন। ক্যাডার সংশোধনী আইন নিয়েও কেন্দ্রের বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে এই দুই মুখ্যমন্ত্রীকে। বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ব্যাপক জয়ের পরে টুইটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন স্ট্যালিন। তবে তা কেবল একপাক্ষিক নন। বিভিন্ন সময়ে স্ট্যালিনের পক্ষেও টুইট করেছেন মমতা। এ বার রাজ্য-রাজ্যপাল ইস্যুতে স্ট্যালিনের টুইট বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
প্রসঙ্গত, শনিবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর একটি টুইট করে জানান, রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন সমাপ্ত করা হচ্ছে। ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। আর এতেই শুরু হয় বিতর্ক। মনে হয়েছিল, পরের বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল। পরে অবশ্য আরও একটি টুইট করে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করেন রাজ্যপাল। কিন্তু, তাতেও থামেনি বিতর্ক। কারণ, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যে বিধানসভার দু’টি অধিবেশন হয়েছে। একটি বাজেট অধিবেশন ও অন্যটি শীতকালীন অধিবেশন। গত ১৭ই নভেম্বর ছিল শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। সেদিন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতুবি করে দেন। ফলে পরের অধিবেশন ডাকতে গেলে পরিষদীয় দফতরের রাজ্যপালের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তাহলে সমস্যা কোথায়? সূত্রের খবর, সাম্প্রতিককালে, রাজ্যপাল ও রাজ্যের সম্পর্ক বেশ জটিল। ফলে, গত বছর ১৭ই নভেম্বর অধিবেশন শেষ হলেও তার যাবতীয় নথি রাজভবনে সময়ে পাঠানো হয়নি বলে অভিযোগ। রাজ্যই ফাইল পাঠাতে দেরি করেছে এমনটাই অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল।
রাজভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে পরিষদীয় দফতর থেকে গত ১০ই ফেব্রুয়ারি রাজভবনে অধিবেশন শেষের ফাইলটি পাঠানো হয়। তারপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর জানিয়ে দেন অধিবেশন সমাপ্ত করা হচ্ছে।পাশাপাশি, রাজ্যের মন্ত্রিসভার সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাজ্যপালের তরফে এমনই খবর সূত্রের। রাজ্যপালের এ হেন সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর আগে কখনও এভাবে নির্দেশিকা জারি করে রাজ্যপাল অধিবেশন সমাপ্তির কথা ঘোষণা করলেন তা কার্যত নজিরবিহীন। কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, অধিবেশন শেষ হয়েছে গত ১৭ই নভেম্বর। রাজ্যের তরফে অধিবেশন শেষের ফাইল এত দেরিতে কেন পৌঁছল? রাজভবনের সূত্র অনুযায়ী ১০ই ফেব্রুয়ারি ফাইল পাঠিয়েছে রাজ্য। ঘটনায়, বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্টই বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা অভিপ্রেত নয়। এমন কোনও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল টুইট করে জানাতে পারেন না।” প্রশাসনিক কোনও সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল টুইট করে জানাবেন এটা কাম্য নয় বলেই দাবি রাজ্য সরকারের। প্রায় একই সুর ফুটে উঠেছে তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের কথায়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “রাজ্যপালের স্বভাব হয়ে গিয়েছে টুইট করা। কিছু হলেই টুইট করতে শুরু করেন। ওঁকে বলব, আপনি সবুজ মনের মানুষ। সেরকমই থাকুন। কখনও গোপন প্রেমে পড়লে আবার টুইট করে ফেলবেন না! সম্পূর্ণ এক্তিয়ার ছাড়া একটি কাজ করেছেন রাজ্যপাল। আমাদের পরিষদীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কি আলোচনা হয়েছে এ বিষয়ে?”