ক’দিন আগেই বাংলা, কেরল এবং কাশ্মীরের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের তুলনা টেনেছিলেন তিনি। যা নিয়ে শুরু হয়েছিল জোর বিতর্ক। এবার তার জের হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন যোগী আদিত্যনাথ। সংসদের ভিতরে-বাইরে এখন সমালোচনার তোপের মুখে তিনি। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দাবিকে প্রতি পদক্ষেপে নস্যাৎ করছে খোদ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান। স্বাস্থ্য, কৃষি, সব নিরিখেই যোগীরাজ্যের থেকে যোজন খানেক এগিয়ে বাংলা, কেরল এবং কাশ্মীর। তবে নারী নির্যাতন ও গার্হস্থ্য হিংসায় এগিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। এখানেই শেষ নয়, জাতীয় স্তরের প্রায় প্রত্যেক বিজেপি বিরোধী নেতা এখন যোগীর উদ্দেশেই উষ্মা প্রকাশ করছেন। শুক্রবার রাজ্যসভায় সিপিএম এমপি জন ব্রিটাস, লোকসভায় কংগ্রেসের মুখ্যসচেতক কে সুরেশ এবং আরএসপির এমপি এন কে প্রেমচন্দ্রন মুলতুবি প্রস্তাবের নোটিশও দেন। বিগত ২০১৯-২০ সালের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের পাতাতেই তা স্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে প্রতি ১০০ জন বিবাহিতার মধ্যে ৩৫ জন গার্হস্থ্য নির্যাতনের শিকার। বাংলায় এই পরিসংখ্যান ২৭ শতাংশ। কেরল এবং জম্মু-কাশ্মীরে যথাক্রমে ৯.৯ এবং ৯.৬ শতাংশ।
পাশাপাশি, সংসারে বিবাহিত মহিলাদের মতামত গ্রাহ্য হওয়ার ক্ষেত্রেও বাংলা এবং কেরলের থেকে পিছিয়ে উত্তরপ্রদেশ। একই প্রবণতা সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। কারণ রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশে ৯১ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ রয়েছে। বাংলায় যা ৯৭.৫। কেরলে ৯৯.৬ শতাংশ। স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রেও যোগী রাজ্যের চেয়ে এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। বাংলায় যেখানে ২৯.৩ শতাংশ পরিবারের কারও না কারও নামে স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে, উত্তরপ্রদেশে সেখানে মাত্র ১৫.৯ শতাংশ। আবার শিশুমৃত্যুর হার বাংলায় ২২ শতাংশ, কেরলে মাত্র ৪.৪ শতাংশ এবং জম্মু-কাশ্মীরে ১৬.৩ শতাংশ। অথচ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নয়নের ঢাক পেটানো উত্তরপ্রদেশে এই হিসেবই পৌঁছেছে ৫০.৪ শতাংশে। শিশুদের টিকাদানের রেকর্ডে চোখ রাখলেও পিছনের সারিতে যোগীরাজ্য। দুই থেকে চার বছর বয়সিদের সম্পূর্ণ টিকাকরণে বাংলার হার ৮৭.৮ শতাংশ, কেরলে ৭৭.৮ এবং কাশ্মীরে ৮৬.২ শতাংশ। আর উত্তরপ্রদেশ? ৬৯.৬ শতাংশ। এরপর আসা যায় কৃষিক্ষেত্রে। কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত পরিবারের মাসিক উপার্জন উত্তরপ্রদেশে মাসে ৮ হাজার ৬১ টাকা। কেরলে সেটাই ১৭ হাজার ৯১৫ টাকা এবং জম্মু-কাশ্মীরে ১৮ হাজার ৯১৮ টাকা। এপ্রসঙ্গে তৃণমূল এমপি সৌগত রায় বলেন, “যে রাজ্যে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই, স্বাস্থ্য, শিক্ষা বেহাল, সেই রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী কীভাবে অন্যদের সমালোচনা করেন? বাংলাকে অপমান করার আগে আয়নায় মুখ দেখুন যোগী।” কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “অপরাধের তালিকায় যে রাজ্য দেশের শীর্ষে, তাদের মুখে অন্যের সমালোচনা শোভা পায় না।”