দেশে কোভিড-প্রকোপের পূর্বকাল থেকেই রীতিমতো ধুঁকছে অর্থনীতি। চাঙ্গা হওয়ার যতটুকু আশা ছিল, সেখানে জল ঢেলে দিয়েছে অতিমারী। ধাক্কা খেয়েছে উৎপাদন, বাজার অর্থনীতির হালও শোচনীয়। এই অবস্থায় রাজস্ব আদায়ে করদাতাদের থেকে জরিমানা আদায়কেই পাখির চোখ করেছিল কেন্দ্র। এক ধাক্কায় বেশ কিছু টাকা আদায়ে বদল এনেছিল আয়কর আইনে। সেই আইনকে কাজে লাগিয়ে দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার করদাতাকে নোটিস ধরায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার মধ্যে বাংলারই গ্রাহক প্রায় ৩০ হাজার। টার্গেট ছিল, জরিমানা বাবদ দু’লক্ষ কোটি টাকা আদায়। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, টাকা আদায়ের লক্ষ্যে নিজের আইন তারা নিজেরাই ভেঙেছে। আর তাতেই রাজস্ব বাড়ানোর সেই ছক বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে আদালতে।
প্রসঙ্গত, কোনও আয়করদাতার কর নির্ধারণ প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলেও সেই কেস ফের খতিয়ে দেখার অধিকার আছে আয়কর দফরের। দফতর যদি মনে করে করদাতা আগের কোনও বছরে হিসেবে কারচুপি করেছেন এবং কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাহলে ফের তাঁর করের হিসেব কষা যাবে। এমন ক্ষেত্রে প্রথমে নোটিস পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট আয়করদাতাকে। এভাবে আগের সর্বাধিক ছ’বছর পর্যন্ত পুরনো হিসেব চাওয়া যায়। এই আইনের সাহায্যে এতদিন মোটা টাকা আদায় করে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবর্ষের জন্য সাধারণ বাজেট পেশের সময় এই নিয়মের বদল আনেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তিনি প্রস্তাব দেন, ছ’বছর নয়, সর্বাধিক তিন বছরের পুরনো হিসেবের খাতা খোলা যাবে। সেই মতো আইন বদলানো হয়। বাজেট পেশ হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। আর এই নিয়ম চালু হওয়ার কথা ছিল ১লা এপ্রিল, ২০২১ তারিখ। সরকার চেয়েছিল, নতুন আইন কার্যকর হওয়ার আগের দু’মাসে পুরনো নিয়ম ঢেলে কাজে লাগানো হবে। সেই মতো একসঙ্গে তিন বছরের পুরনো খাতা খুলে আয়কর নোটিশ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হয়। আয়কর দফতর সূত্রে খবর, তাদের লক্ষ্য ছিল এখান থেকে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা।
মাত্র দু’মাসের মধ্যে যে কাজ সারতে চেয়েছিল মোদী সরকার, তা সম্ভব হয়নি। বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং পরিকাঠামোর অভাব। জরিমানা বাবদ রাজস্ব আদায় হবে না বুঝে সরকার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, পুরনো নিয়ম জুন মাস পর্যন্ত প্রযোজ্য। অর্থাৎ একযোগে তিন বছরের ফাঁকি খুঁজে করদাতাদের নোটিশ পাঠাতে আরও তিন মাস বাড়তি সময় পাইয়ে দেওয়া হয় দপ্তরের কর্তাদের। তখনই নোটিশের সংখ্যা পৌঁছয় প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজারে।
এরপরই আপত্তি জানান করদাতারা। তাঁদের যুক্তি, সরকার আইন করে যে নিয়ম ১লা এপ্রিল থেকে চালু করার কথা ঘোষণা করেছে, তা বদলাতে গেলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন বদল করা যায় না। সেই যুক্তিতেই আদালতে যান করদাতারা। দিল্লী হাইকোর্ট সহ একাধিক কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। সরকার সব মামলায় হেরেছে। ফলে সরকারের পাঠানো ১ লক্ষ ৩৫ হাজার নোটিশই আইনি বৈধতা হারিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর তাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকারের। থমকে গেছে দু’লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনাও।