একুশের ভোটযুদ্ধে বিজেপিকে রুখে দিয়ে বাংলায় তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। আর তারপরেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে শুরু হয়েছে অন্যান্য রাজ্যে সংগঠন বিস্তার করে দলকে সর্বভারতীয় স্তরে মেলে ধরার চেষ্টা। আর সেই লক্ষ্যেই গোয়ায় সংগঠন বিস্তারে আরও মনোযোগী তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোঙ্কন উপকূলে জোড়াফুল ফোটাতে দু’দিনের গোয়া সফরে পরপর তিনটি জনসভা করতে চলেছেন তিনি। আর তাতে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের রবিবারের বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাবেন তিনি। আজ, সোমবার গোয়ায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন তৃণমূল নেত্রী এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জনসভায় বক্তব্য পেশ করার কথা তাঁদের। দলীয় সূত্রের সেখানে মমতা-অভিষেক বড় হাতিয়ার করতে চলেছেন মোদী ও নির্মলার রবিবারের ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত ঘোষণাকে।
প্রসঙ্গত, রবিবার প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে গেলে তিন মাসের মধ্যে প্রত্যেক আমানতকারীকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে। সূত্রের খবর এই খাতে এটিই এখন ক্ষতিপূরণের সর্বোচ্চ অঙ্ক। অর্থাৎ কারও ৫০ লাখ টাকা থাকলেও তিনি পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পাবেন। উল্লেখ্য, গত বছর এই সংক্রান্ত আইনের সংশোধন করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখনই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, হঠাৎ ব্যাঙ্ক দেউলিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কেন বাড়াতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার? আশঙ্কা করা হয়েছিল অনেক ব্যাঙ্ক হয়তো অচিরেই দেউলিয়া ঘোষণা করা হবে। তারই প্রাথমিক ধাপ হিসেবে বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে একত্রীকরণ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা সন্দেহ করছিল এসবই আসলে দেউলিয়া ঘোষণা করার প্রাথমিক ধাপ। রবিবার ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পরই তৃণমূল শিবির এ নিয়ে সরব হয়েছে। জোড়া ফুল নেতৃত্ব পাঁচটি প্রশ্ন তুলেছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে।
তাদের বক্তব্য— ১) হঠাৎ কেন ব্যাঙ্ক দেউলিয়ার কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী? তাহলে কি ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক অবস্থা সত্যিই এতটা শোচনীয়? ২) প্রধানমন্ত্রী মোদী দেশের আর্থিক হাল ফেরাতে ঘটা করে বিমুদ্রাকরণ করেছিলেন মাঝরাতে। তিনি বলেছিলেন এর ফলে ব্যাঙ্ক-সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘুরে দাঁড়াবে। তাহলে এখন ব্যাঙ্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এত উদ্বিগ্ন কেন? কেন তাকে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হওয়ার কথা বলতে হচ্ছে এবং তিনি ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ সামনে আনছেন? ৩) ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক হাল ফেরাতে অনেকগুলিকে একত্রে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেন দেউলিয়া হওয়ার কথা বলা হচ্ছে? এই আশঙ্কা প্রকাশ করে আসলে কি প্রধানমন্ত্রী কোন প্রকৃত সত্য চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছেন? ৪) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অর্থ মন্ত্রক ব্যাঙ্কগুলোর আর্থিক স্বাস্থের দিকে নজর রাখে। তাহলে কি সেই সূত্রে প্রধানমন্ত্রী কোনও খারাপ আভাস পেয়েছেন, নাকি তারা আদৌ ব্যাঙ্কের দিকে নজর রাখছে না? ৫) প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী একদিকে দেশের আর্থিক হাল ফেরানোর কথা বলছেন। অন্যদিকে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া পরবর্তী ক্ষতিপূরণের কথা বলছেন। দুটি বক্তব্য পরস্পর বিরোধী নয় কি?