মাত্র ১০ দিন আগে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলায় বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি। তা যে স্রেফ কথার কথা নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন আদানি গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। শুধু আগ্রহ দেখানো নয়, তাঁর সংস্থা বিনিয়োগের পথে ইতিমধ্যে এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে।
এতে কর্মসংস্থানের সুযোগও আসবে। তাই দুই পর্যায়ে মোট প্রায় ১৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এখানকার ছ’টি বার্থের আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। দেশের সাতটি রাজ্যে ১৩টি বন্দর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আদানি গোষ্ঠী তাতে অংশ নিয়ে বাংলায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল করেছে।
ইতিমধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে এসএমপির নিয়ন্ত্রণাধীন হলদিয়া ডকে একটি বার্থ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে আদানি পোর্টস। এই বার্থে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জাহাজ থেকে কয়লা নামানো হবে।
খিদিরপুর ডক ছাড়াও রাজ্যে আদানি গোষ্ঠী আরও বড় বিনিয়োগে আগ্রহী বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। কারণ, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি মডেলে) খিদিরপুর ডকের ছ’টি বার্থের পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
সাধারণত যে বেসরকারি সংস্থা প্রকল্পের নির্মাণকাজ করে, পরবর্তী কয়েক বছর তাদের হাতেই থাকে সেটির পরিচালনভার। নির্দিষ্ট সময়সীমা পার হওয়ার পর সরকারকে প্রকল্পটি হস্তান্তর করা হয়। এই ব্যবস্থাকে সাধারণভাবে বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (বিওটি) বলা হয়।
তাজপুরের ক্ষেত্রে এর সঙ্গে ফিনান্স অ্যান্ড ডিজাইন শব্দ দু’টি যোগ করা হয়েছে। রাজ্য শিল্প উন্নয়ন নিগম ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোগীদের থেকে প্রস্তাব চেয়েছে। শেষ দিন আপাতত ২০ ডিসেম্বর। জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পটি নিয়ে আগ্রহী সংস্থাগুলির প্রাথমিক বৈঠকে অংশ নিয়েছে আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিও।
কলকাতা বন্দরের খিদিরপুর ডকে মোট ছ’টি বার্থ বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন ও আধুনিকীকরণের দরপত্র ডেকেছিল শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর (এসএমপি) কর্তৃপক্ষ। তাতে অংশ নিয়েছে আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড লিমিটেড।
এসএমপির চেয়ারম্যান বিনীত কুমার জানিয়েছেন, আদানি গোষ্ঠী সহ মোট ছ’টি সংস্থার প্রস্তাব ইতিমধ্যে কারিগরি এবং জাহাজ মন্ত্রকের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি এই প্রকল্পের জন্য আর্থিক দরপত্র খোলা হতে পারে।
কলকাতা বন্দরের দু’টি অংশ। নেতাজি সুভাষ ডক (এনএসডি) ও খিদিরপুর ডক। কন্টেনারবাহী জাহাজগুলি এখন মূলত এনএসডিতে পণ্য নামায়। খিদিরপুর ডকে মোট ১৮টি বার্থ থাকলেও, এর বাণিজ্যিক ব্যবহার খুবই সীমিত।
আন্দামানগামী যাত্রী জাহাজ ছাড়া এই ডকে কিছুটা ‘ড্রাই বাল্ক গুডস’ ওঠানামা করে। আগামী দিনে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশ হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে জলপথে পণ্য পরিবহণ বৃদ্ধি পেলে খিদিরপুর ডকের গুরুত্ব বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।