একুশের ভোটের আগেই তুরুপের তাস হিসাবে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের আরও ব্যাপ্তি বাড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যা রীতিমতো গেম চেঞ্জার হয়ে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সমালোচনা, কটাক্ষ করলেও সাধারণ মানুষ এই কার্ডের সুবিধার কথা অস্বীকার করছেন না। ছেলের মাথায় টিউমার ধরা পড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে আসা ব্যক্তিও এখন খরচের চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে বলতে পারছেন, ‘দিদি স্বাস্থ্য সাথী দিয়েছেন, চিন্তা কি!’
প্রসঙ্গত, সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই চাহিদা বেড়েছে ‘মেডিক্লেম পলিসি’র। মধ্যবিত্ত বাঙালি গ্রাসাচ্ছাদনের টাকা জোগাড় করেই চেষ্টা করে স্বাস্থ্যবিমার টাকা মেটানোর। আর এই উপযোগিতাকে ধরেই ইস্যু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। প্রায় সব দলের ইস্তাহারেই ঠাঁই হয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিমার। স্বাস্থ্যসাথী না আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প? কোনটি ভাল? ভোটের আগে আবার এসেছে সেই বহুচর্চিত প্রশ্ন। স্বাস্থ্যসাথীর জনপ্রিয়তা অবশ্যই এই দু’টি প্রকল্পকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আগে থেকেই অসংগঠিত শ্রমিকদের থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষক, চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক, সিভিক ভলান্টিয়ার, হোম গার্ড, আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের যুক্ত করা হয়েছিল। তার আগে ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প অনুমোদিত হয়। গত বছরের পুজোর পরই আমজনতার বিমা হয়ে ওঠে এটি। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচীতে দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ লাইন দিয়ে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড করছেন মানুষ। যেখানে বার্ষিক পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসাজনিত সুবিধা পাবেন পরিবারের সদস্যরা। এবং উল্লেখযোগ্য যে পুরো টাকা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
নবান্নের তথ্য অনুযায়ী, দুয়ারে সরকার-এ ৭৭ লক্ষের বেশি কার্ড দেওয়া হয়েছে। আর সব মিলিয়ে জনসংখ্যার কার্ড দেওয়া হয়েছে দেড় কোটির বেশি। জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ এই কার্ডের আওতায় এসেছেন বা তাঁদের পরিবার কার্ড নিয়েছে। ১০ লক্ষ ৫১ হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে পরিষেবা পেয়ে গিয়েছেন বা ভর্তি হয়েছেন। দু’হাজার ২৪০টি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিচ্ছে, রাজ্যের সঙ্গে চুক্তিভুক্ত এরা। উল্লেখযোগ্যভাবে এর মধ্যে ভেলোর বা এইমসও রয়েছে। অনেকটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে পারছেন মানুষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখন এই প্রকল্পকে সাথী করে ভোট-বৈতরণী অনায়াসে পেরিয়ে যাওয়ার দাবি করছে তৃণমূল।