নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহত হওয়ার ঘটনায় শুক্রবার মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের রিপোর্ট জমা পড়ল রাজ্য নির্বাচন কমিশনে। শুক্রবার কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে জমা পড়েছে ওই রিপোর্ট। শুক্রবারই তা পাঠানো হয়েছে নয়াদিল্লীতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে। সূত্র অনুযায়ী, রিপোর্টে নন্দীগ্রামের ঘটনার দিন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিক তথা কর্মীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে আরও কিছু বিষয়। বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের সামনে ছিলেন ওই থানার ওসি। মুখ্যমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ছাড়া ওই সফরের পূর্ণাঙ্গসূচী সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ছিলেন না তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ আধিকারিকেরা। পাশাপাশি, ঘটনার দিন মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের অভিমুখ বার বার বদল করা হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
স্বাভাবিকভাবেই? নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এ নিয়ে শাসকদল তৃণমূল ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছে। অন্য দিকে, তা খারিজ করে বিজেপি এবং কংগ্রেসের দাবি, গোটা ঘটনাটাই অতিনাটকীয়। তবে শাসক বনাম বিরোধীদের রাজনৈতিক তরজার মাঝেই তা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করে নির্বাচন কমিশন। কী ভাবে জেড প্লাস নিরাপত্তার বলয় সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী আহত হলেন, বা ওই মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ মতো তাঁর উপর হামলা হয়েছিল কি না, অথবা এটি নিছকই দুর্ঘটনা – সমস্ত কিছুই খতিয়ে দেখতে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল।
এদিন কমিশনের কাছে এই রিপোর্ট পেশের আগে সকালে মেদিনীপুর যান নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক এবং পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম,এই তিন জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গেও তাঁদের বৈঠক হওয়ার কথা। পাশাপাশি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলবেন নির্বাচন কমিশনের এই দুই পর্যবেক্ষক। কমিশনকে তাঁদেরও রিপোর্ট দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবার নন্দীগ্রামে গিয়ে ওই কেন্দ্রের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিল করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সেখানে একটি কর্মীসভা করে নন্দীগ্রামের রানিচকে একটি মন্দিরে হরিনাম সংকীর্তনে যোগ দেন তিনি। ওই মন্দির থেকে ফেরার পথেই আহত হন মমতা।
মমতার আহত হওয়ার ঘটনায় ষড়যন্ত্রের-র গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। অভিযোগে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার তৃণমূলের তরফে এ নিয়ে অভিযোগও করেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৌগত রায় এবং কাকলি ঘোষ দস্তিদারেরা। অভিযোগে নিজেদের তত্ত্বের পক্ষে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করেছেন তাঁরা। ঘটনার আগে নেটমাধ্যমে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ যে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন অথবা বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং বাবুল সুপ্রিয়র পোস্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর উপর আগে থেকেই হামলার পরিকল্পনা ছিল – এমনই দাবি করেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, ঘটনার সময় মমতার নিরাপত্তার দায়িত্বে কোনও পুলিশকর্মী ছিলেন না বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এমনকী, ওই ঘটনার পর স্থানীয় যে দুই বাসিন্দার দাবি ছিল যে একটি লোহার খুঁটির সঙ্গে মমতার গাড়ির ধাক্কা লেগেছে, সে দু’জনও তুমুল শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পাল্টা অভিযোগ জানানো হয়েছে।