আগেই পৈলানের কর্মী সম্মেলন থেকে পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধেতে সরকারি ভাবে সরব হল তাঁর দল। নামখানায় পরিবর্তন যাত্রার সূচনায় এসে অমিত শাহের করা ৯টি অভিযোগের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি গতকাল সর্বভারতীয় তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা ৯টি যুক্তি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হল।
শাহের অভিযোগ ছিল, উম্পুন ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির যে অর্থ মোদী সরকার পাঠিয়েছিল, তা পুরোপুরি আত্মসাৎ করেছে তৃণমূলের সিন্ডিকেট। শাহের এই প্রথম অভিযোগের জবাবে তৃণমূল তথ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, উম্পুনে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১.০২ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্রের কাছে বকেয়া রয়েছে, ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এছাড়াও এসডিআরএফের ৩২ হাজার ৩১০ কোটি আরও পাওনা রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, শাহ অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের শিক্ষকরা চাকরি পাওয়ার জন্য লড়াই করছেন। তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত নভেম্বর মাসেই ১৬ হাজার ৫০০ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ৫০০ পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে নেপালি, হিন্দী ও উর্দু বিদ্যালয়ে। পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন প্রতি বছর ৩ শতাংশ করে বৃদ্ধি হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, সরকারি পদে ৩০ শতাংশ মহিলাদের চাকরির সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁর এই যুক্তির পাল্টা তৃণমূল দাবি করেছে, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে তাঁদের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তাঁরা সংসদে ৩৩ শতাংশ আসনে মহিলা সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পূরণ করেনি।
শুধু তাই নয়, তৃণমূল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিজেপির মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব যথাক্রমে ১৪ ও ১১ শতাংশ। আর দুটি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব ৪১ ও ৩১ শতাংশ। এবং পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত স্তরে মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছে।
মমতা মৎস্যজীবীদের আয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যক্ষেত্রে করতে পারেননি বলেও অভিযোগ করেছিলেন শাহ। জবাবে মৎস্যজীবীদের জন্য রাজ্য সরকার কী কী কাজ করেছে, তাঁর ফিরিস্তি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। মৎস্যজীবীদের পেনশনের কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই বলা হয়েছে তাঁদের জন্য মমতা সরকারের গৃহনির্মাণ প্রকল্পের কথাও। উৎসবের মরসুমে যে তাঁদের ২০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে, তা-ও জানাতে ভোলেনি তৃণমূল।
শাহ অভিযোগ করেছিলেন, মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে ইন্টিগ্রেটেড ফিশারি জোন তৈরির কথা বলেও তা করা হয়নি। এই অভিযোগের জবাবে তৃণমূল জানিয়েছে, জল ধরো জল ভরো প্রকল্প মারফত ৩১ হাজার ৫১৭টি পুকুর কাটা হয়েছে। যাতে খরচ হয়েছে ১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। এছাড়াও, বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী মারফত মৎস্যজীবীদের উন্নয়নের নিরন্তর প্রক্রিয়া রাজ্য সরকার চালিয়ে যাচ্ছে।
নামখানার সভা থেকে সুন্দরবন এলাকার অনুন্নয়নের জন্য যে অভিযোগের আঙুল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তুলেছেন তার জবাবে সুন্দরবন এলাকার পরিকাঠামো ও উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য, তা বিবৃতিতে তুলে ধরা হয়েছে। সেতু-জেটি নির্মাণ থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণের মোট হিসাব তুলে দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
রাজনৈতিক আক্রমণে গিয়ে শাহ অভিযোগ করেন, তৃণমূল জমানায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ১৩০ জন বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন। তাঁর সপ্তম অভিযোগ খণ্ডন করে তৃণমূল জানিয়েছে, ১৯৯৮ সাল থেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কারণে ১০৬৭ কর্মী খুন হয়েছিলেন। আর বিজেপি সাংসদদের মধ্যে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত মামলা রয়েছে, তাও এই বিবৃতিতে জানিয়ে গেরুয়া শিবিরকে খোঁচা দিয়েছে তৃণমূল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, রাজ্যে অনুপ্রবেশ সমস্যা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন মমতা। এর জবাবে তৃণমূল সাফ জানিয়েছে, সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকে বিএসএফ। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন ব্যর্থ হলেন, তার জবাব দিন তিনি। শাহর দাবি ছিল, যেখানে ইউপিএ সরকার রাজ্যকে ১.৩২ লক্ষ কোটি টাকা দিয়েছিল। সেখানে গত পাঁচ বছরে নরেন্দ্র মোদীর সরকার দিয়েছে ৩.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা। ঘুরিয়ে তৃণমূলের প্রশ্ন, কেন এখনও ৭৭ হাজার কোটি বকেয়া রয়েছে বাংলার?