শুরু হয়ে গেছে বিধানসভা নির্বাচনের কাউন্টডাউন। রাজ্যজুড়ে সভা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার তাঁর মুখে ফিরল ২০১৬ বিধানসভা ভোটের আবেদন। পাঁচ বছর আগের ভোটের মতো শুধু তাঁকে দেখেই এবারও ভোটারদের কাছে ভোট দেওয়ার আর্জি জানালেন তৃণমূল নেত্রী। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃমমূলের কয়েকজন প্রার্থীকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় মমতা প্রচারে বলেছিলেন, ‘‘২৯৪টি কেন্দ্রে আমিই প্রার্থী।’’ রাজ্য রাজনীতির অনুসারীদের একাংশ মনে করে, তাঁর ওই আহ্বান ২০১৬ সালের ভোটের মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এবারও সেই একই পথে হাঁটলেন মমতা।
বুধবার উত্তরবঙ্গের মালদহের কর্মীসভা থেকে মমতা সরাসরিই বলেছেন, ‘‘কে প্রার্থী দেখবেন না। এটা আমার ভোট।’’ তৃণমূল এবং বিরোধী শিবিরের অনেকেই মনে করেন, ভোটের ময়দানে মমতা একজন ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসাবে কাজ করেন। দলের একাধিক প্রথমসারির নেতা মনে করেন, রাজ্যের মানুষের কাছে মমতারই বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা এখনও সবচেয়ে বেশি। ফলে তাঁর বুধবারের আবেদন ভোটাররা গ্রহণ করবেন বলেই দাবি দলের নেতাদের।
সারদা, রোজ ভ্যালির মতো চিটফান্ড দুর্নীতিতে রাজ্যের শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের মুখে নারদ গোপন ক্যামেরা অভিযানের ভিডিয়ো প্রকাশিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছিল তৃণমূল। বিরোধীদের কড়া সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে বলতে হয়েছিল, আগে জানলে ওই অভিযুক্তদের টিকিট দিতেন না। তবে ঘুরে দাঁড়াতে ‘মমতাজাদু’-কেই হাতিয়ার করেছিল তৃণমূল। নিজেকে ২৯৪টি কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা করে প্রতিটি নির্বাচনী সভায় প্রচার চালিয়েছিলেন মমতা। তাতে কাজ হয়েছিল। ২০১৬ সালে আরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল।
পাঁচ বছর পর ফের রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসন্ন। আবারও সেই মমতা ‘সঞ্জীবনী’কেই কাজে লাগাতে শুরু করে দিলেন মমতা। মালদহের সভা থেকে বুধবার তিনি বলেন, ‘‘কে প্রার্থী দেখবেন না। এটা আমার ভোট। আমাকেই ভোট দেবেন।’’ ২০১৬-র মতো এ বারও আরও বেশি আসন নিয়ে বাংলায় তৃণমূল সরকার গঠন করবে বলে দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে এ বারের বিধানসভা ভোট ২০১৬-র পরিস্থিতির চেয়ে আলাদা। ২০১৬ সালে মূল প্রতিপক্ষ ছিল বাম-কংগ্রেস জোট। কিন্তু বছর দেড়েক আগে লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১৮টি আসন জিতে বাংলায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। তৃণমূলও ‘স্বাস্থ্যসাথী’, ‘খাদ্যসাথী’র মতো জনমুখী প্রকল্পকে হাতিয়ার করে ক্ষমতায় ফেরার হ্যাটট্রিকের আশায়। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে বাংলা আবেগকেও হাতিয়ার করতে ছাড়ছেন না মুখ্যমন্ত্রী। মালদহের সভায় মমতা বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) বার বার কেন বাংলায় আসছে। ভাবছে মমতার মেরুদণ্ড ভেঙে দাও ! কারণ, ওরা জানে আমার মেরুদণ্ড ভাঙলে সারা দেশে প্রতিবাদ করার আর কেউ থাকবে না।’’