সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান নিয়ে এখনও সংশয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরে তা স্পষ্ট ভাবে জানতে চায় ঠাকুরনগর। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভায় যোগ দেওয়ার কথা অমিতের। সে জন্য বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। সেই প্রস্তুতি বুধবার খতিয়ে দেখেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁর বিজেপি নেতা তপন সিংহ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গড়িমসির জেরে নাগরিকত্বের বিষয়ে সংশয় উঠেছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। তাই অমিত-বার্তার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে মতুয়া সমাজ। নাগরিকত্বের প্রশ্নে এই সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের ধৈর্য কিনারায় পৌঁছেছে, তা-ও মানছেন অনেকে। তা আঁচ করেছেন শান্তনু। ‘‘এর আগে কেউ সিএএ নিয়ে ভাবেননি। মতুয়ারা এই দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই জানিয়ে আসছে। আগামিকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সিএএ নিয়ে তাঁদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দেবেন।’’ জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শান্তনুর এই বার্তা দ্বন্দ্বকে স্পষ্ট করে তুলেছে বলেও পর্যবেক্ষকদের কারও কারও মত। বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগর সফরকালে সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা দেওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এমনটা বাস্তবে আদৌ ঘটবে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহপ্রকাশ করছে বনগাঁর তৃণমূল শিবির। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মতে, ‘‘অমিত শাহ রাজনৈতিক সভা করতে আসছেন। উনি সিএএ নিয়ে কিছুই বলবেন না। কারণ উনি জানেন, এটা কখনই করতে পারবেন না।’’ মমতাবালার সুরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘অমিত শাহ এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে কী বলেন আগে শুনি। মতুয়াদের দাবি মতো, নির্বাচনের আগে উনি কী করে এটা চালু করবেন জানি না। বিষয়টায় ধোঁয়াশা রয়েছে। অমিত শাহের এই সফর মতুয়ারা কতটা গ্রহণ করবেন তা-ও জানি না। শান্তিপ্রিয় মতুয়াদের হয়তো উনি ভুল বুঝিয়ে চলে যেতে পারেন।’’
উল্লেখ্য, মতুয়াদের দেওয়া সিএএ আশ্বাস পূরণে একের পর এক তারিখ। বিজেপি সাংসদ সানি দেওলের ছায়াছবি ‘দামিনী’-তে তাঁর মুখের সংলাপ ধার করেই মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত গৌরাঙ্গ হালদার এবং অধীর দেওয়ান বললেন, ‘‘তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ। কবে এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে জানা নেই। দেখি কাল কী হয়।’’ গত ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে শান্তিনিকেতন সফর ছিল অমিতের। বোলপুরে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এখনও নাগরিকত্ব আইন পুরোপুরি হওয়া বাকি আছে। এখনই সিএএ নিয়ে ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার। আপাতত করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই মূল লক্ষ্য। একবার টিকা দেওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি সামলানো যাবে। তার পর সিএএ প্রয়োগ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করবে বিজেপিশাসিত সরকার।
এরপর অমিতের এই বার্তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল মতুয়াদের মধ্যে। মুখ খুলেছিলেন শান্তনুও। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, দলীয় কর্মসূচীও এড়াতে শুরু করেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। কিন্তু গত জানুয়ারির শেষ ধাপে অমিতের ঠাকুরনগর সফরের খবরে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বিধি বাম। সে বারও একে বারে শেষলগ্নে অমিতের সফর বাতিল হয়। দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের কারণে বদলে যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফরের তারিখ। সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়ে রাজ্য বিজেপি-ও। নাগরিকত্ব প্রশ্নে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন শান্তনু।
প্রসঙ্গত, সিএএ নিয়ে আশ্বাসের পাশাপাশি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রাক্মুহূর্তে নতুন একটি দাবি ভাসিয়ে দিয়েছেন শান্তনু। রাজ্যের ৮০টি আসনে মতুয়া ভোট ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁর মত। তাই ওই সব আসনে মতুয়া সম্প্রয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছাই করার দিকে জোর দিয়েছেন তিনি। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ এমনটা চায় বলেও জানিয়েছেন বনগাঁর সাংসদ। তবে শান্তনুর ওই কৌশল কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। বনগাঁর তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠের মতে, ‘‘যিনি বাড়ির পাশের লোককে চেনেন না, তিনি ৮০টি বিধানসভা আসনে নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন দেখেন কী করে? উনি নামেই সাংসদ। ওঁর কোনও কার্যকলাপ নেই। সেই কারণে ওঁর নাম বনগাঁর মানুষ ভুলে গিয়েছেন।’’ মতুয়ারা তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছেন বলে দাবি করেছেন গোপাল শেঠ।