অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় তাদের বানানো গ্রাম নিজেদের এলাকার ভিতরেই গড়েছে তারা। বৃহস্পতিবার এমনই দাবি করল চীনের বিদেশমন্ত্রক। মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুন্যিংয়ের কথায়, “এটা স্পষ্টতই চীনের অংশ। চীন-ভারত সীমান্তের পূর্বে জংনন এলাকায় গ্রাম বানানো হয়েছে। আমরা এখানে অবৈধ কিছুই দেখিনি, এটা অরুণাচল প্রদেশ নয়।” প্রসঙ্গত এই ঘটনা প্রসঙ্গে কদিন আগেই কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করেছিলেন রাহুল গান্ধী। দেশের সুরক্ষা পালনে ব্যর্থ বিজেপি, এই বলে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।
সম্প্রতি খবর পাওয়া যায়, গোপনে অরুণাচল প্রদেশের মধ্যেই আস্ত একটা গ্রাম বানিয়ে ফেলেছে চীন। ২০২০ সালের ১লা জানুয়ারি তোলা উপগ্রহ চিত্রে সেই গ্রামটি দেখা গিয়েছে। গ্রামটির অবস্থান সীমান্তের সাড়ে চার কিলোমিটার ভেতরে। উজান সুবনসিরি জেলায় সারি ছু নামে এক নদীর তীরে গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামটি। সেখানে ১১০টি কুঁড়েঘর রয়েছে। গত ২০১৯ সালের ২৬শে আগস্ট উপগ্রহ থেকে ওই অঞ্চলের ছবি তোলা হয়েছিল। তখন সেখানে কোনও বাড়ি দেখা যায়নি। কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরে তোলা ছবিতে সেখানে ১০০-এরও বেশি বাড়ি দেখা যাচ্ছে। তা থেকে পরিষ্কার, গত বছরেই গ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছে। ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরেই সীমান্তে বেআইনি নির্মাণ চালিয়ে যাচ্ছে চীন। এবার এই নিয়েই নিজেদের ওয়েবসাইটে বিবৃতি জারি করল চীনের বিদেশমন্ত্রক। সেখানে তারা বেপরোয়া ও সাহসী। স্পষ্ট বক্তব্য তাদের, “এটা চীনের নিজের দেশের ব্যাপার। নিজের আওতাতেই গ্রাম গড়েছে সে।” গত অক্টোবরে চীনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছিলেন, “কিছুদিন ধরেই ভারত সীমান্তে পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। বাড়তি সেনাও মোতায়েন করছে। সেজন্যই সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে।” কিন্তু অরুণাচল প্রদেশে নতুন চীনা গ্রামের আশেপাশে ভারত কোনও রাস্তা বা অন্য পরিকাঠামো গড়ে তুলেছে বলে দেখা যায়নি।
এই ঘটনার পরেই গত নভেম্বরে অরুণাচলের বিজেপি সাংসদ তাপির গাও লোকসভায় জানিয়েছিলেন, উজান সুবনসিরি জেলায় চীনারা প্রায়ই ঢুকে পড়ছে। সোমবার সকালে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, চীনারা অরুণাচলে ঢুকে দুই লেনের রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে। এখনও তারা পরিকাঠামো বানিয়ে চলেছে। সীমান্ত পেরিয়ে ৬০-৭০ কিলোমিটার ঢুকে পড়েছে তারা। যা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। অরুণাচলের বুম লা বরাবর তিনটি এনক্লেভ তৈরি হয়েছে। গত বছর ১৭ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে নভেম্বর অবধি, তিনটি জনপদ তৈরি হয়েছে। উপগ্রহ চিত্র পরপর সাজিয়ে দেখা গেছে, যেখানে আগে একটি জনপদ ছিল, পরে সেখানেই তিনটি জনপদ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি জনপদে ৫০টি করে কাঠামো রয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সবই তৈরি হয়েছে। গ্রামগুলিকে সংযুক্ত করে পাকা পিচের রাস্তাও তৈরি হয়েছে। ওই গ্রামগুলিতে সেনাদের থাকার ব্যবস্থাও করা হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চীন সীমান্তে লাদাখে গতবছর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে অরুণাচল সীমান্তেও নিঃশব্দে এলাকা দখলের চেষ্টা করছে চিন। গতবছর ১৫ই জুন গালওয়ানে টহলরত ভারতীয় সেনার উপর আচমকা হামলা করে চীনা সেনা। এই হামলায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন। পাল্টা মারে চীনের প্রায় ৩৫ জন জওয়ান নিহত হয় বলে খবর। অবশ্য চীনের তরফে এই সংখ্যা জানানো হয়নি। এরপর থেকে দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তারপর থেকে সেনার উচ্চ পর্যায়ের ও কূটনৈতিক স্তরে প্রচুর বৈঠক হয়েছে। দু’দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরাও বৈঠকে বসেছেন। কিন্তু মেলেনি কোনো সুরাহাসূত্র। এই সীমান্ত সংঘাতের আবহে অরুণাচলের গুরুত্ব বরাবরই প্রকট। অরুণাচল সীমান্তেও বরাবরই চীনের বাহিনীর নজর। ভারত-ভুটান-চীন এই ত্রিদেশীয় সীমান্ত খুবই স্পর্শকাতর। এই ত্রিদেশীয় সীমান্তের বুম লা বরাবর গত এক বছর ধরে তিনটি জনপদ গড়ে ফেলেছে চীনের সরকার, জানিয়েছে গোয়েন্দা সূত্র। এই গিরিপথ ভারতের সীমানা থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই। আর চিন্তার ব্যাপার হল, গ্রামগুলি থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থান করছে বিতর্কিত ডোকলাম সীমান্ত।
এবিষয়ে প্রতিরক্ষা সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুক্তি মাফিক কোনও দেশের সেনাই বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হতে পারে না। আঞ্চলিক সীমান্তগুলির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ দুই দেশই। কিন্তু চীনের বাহিনী সে চুক্তি বারবার লঙ্ঘন করেছে। গালওয়ানের সংঘাত তার অন্যতম বড় প্রমাণ। সেনা ঢুকিয়ে জোর করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সম্ভব নয় বুঝেই চীন ঘুরপথে একটু একটু করে সীমান্তে তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। এই গ্রামগুলি সেজন্যই তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, চীনের স্ট্র্যাটেজি হ…