মার্কিন সংসদে পালাবদলের পর স্বভাবতই অখুশি ছিলেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বারবার কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন। আদালত অবধিও গেছেন তিনি। এবার প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিদায়বেলাতেও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের নাম উচ্চারণ করলেন না ট্রাম্প। যদিও সপ্তাহখানেক মৌন থাকার পর সুর নরম করে আমেরিকার নতুন প্রশাসনের সাফল্যের জন্য প্রার্থনার আর্জি জানালেন দেশবাসীর কাছে। ‘‘এই সপ্তাহে আমরা নতুন প্রশাসনের সূচনা করব। আমেরিকাকে সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ রাখতে তার সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করুন।’’ মঙ্গলবার একটি ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন ট্রাম্প।
আগামীকাল, বুধবারই আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। তার আগে বিদায়ী ভাষণে ডেমোক্র্যাট দলের ভাবী প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে রিপালিকান দলের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের শুভকামনা জানাই। এবং ওঁদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হোক।’’ সেই সঙ্গেই বলেন, ‘‘আমি এক দশকের মধ্যে প্রথম প্রেসিডেন্ট, যার আমলে কোনও নতুন যুদ্ধ শুরু হয়নি।’’ প্রসঙ্গত, নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে বাইডেনের কাছে পরাজিত হলেও তা স্বীকার করতে চাননি ট্রাম্প। বাইডেন শিবির ৩০৬টি ইলেক্টোরাল কলেজের দখল নিলেও তা ‘চুরি’ করে নেওয়া হয়েছে বলে বার বার দাবি করেছেন। এমনকী, ব্যক্তিগত স্তরেও বাইডেনকে এক বারের জন্য অভিনন্দন জানাননি তিনি। ট্রাম্পের কাছে থেকে এখনও পর্যন্ত ওভাল অফিসে প্রথামাফিক চায়ের আমন্ত্রণও পাননি ভাবী প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে বিদায়ী ভাষণে একটু সৌজন্যের আঁচ পাওয়া গেল ট্রাম্পের গলায়।
মার্কিন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের বিদায়ী ভাষণের ভিডিও তারা পরে প্রকাশ করবে। তবে তাঁর ভাষণের যে সারাংশ প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে শোনা গিয়েছে নিজের প্রশাসনের প্রশংসাও। বিরোধীদের দাবি, করোনাভাইরাসের মতো অতিমারীকে অবজ্ঞার ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের আমলেই আমেরিকায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ লক্ষেরও বেশি আক্রান্ত। অর্থনীতিও অবনমনের মুখে পড়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা যা করার জন্য ক্ষমতায় এসেছিলাম, তা-ই করে দেখিয়েছি। বরং তার থেকেও বেশি করেছি। কড়া লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছি। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, সে জন্যই আমাকে নির্বাচিত করা হয়েছিল।’’
এছাড়াও, রাষ্ট্রপতি পদে তাঁর মেয়াদ শেষের আগে ক্যাপিটল ভবনে তাণ্ডবে প্ররোচনা দেওয়ার মতো অভিযোগও উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ইমপিচমেন্টের খাঁড়াও ঝুলছে তাঁর উপর। তা সত্ত্বেও ট্রাম্পের মন্তব্য, ‘‘নিজেদের উপর তথা এই মহান দেশের প্রতি আস্থা হারানোটাই হবে সবচেয়ে ব়ড় ভয়াবহ বিষয়।’’ বিদায়কালে ট্রাম্প আত্মবিশ্বাসী হলেও বেশ আবেগপ্রবণ দেখা গিয়েছে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে। ওয়াশিংটনে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উড়ে যাওয়ার আগে ডেলাওয়্যারে নিজের শহর উইলমিংটনে নিজের প্রয়াত ছেলে বিউ-র স্মৃতিচারণ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘‘আবেগপ্রবণ হওয়ার জন্য ক্ষমা করবেন। তবে আমার শেষসময়ে ডেলাওয়্যার হৃদয়ে থেকে যাবে। কেবল একটি আক্ষেপ থেকে গেল ও (ছেলে) এখানে উপস্থিত নেই।’’ জানিয়েছেন আমেরিকার নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি।