নাসার আগেই চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল চীন। শুধু তাই নয়, সফল অভিযানের পর ফের পৃথিবীতে ফিরছে তাদের চন্দ্রযান, এমনটাই জানাল তারা। প্রায় ২ কিলোগ্রাম নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরছে চীনের চন্দ্রযান চ্যাং ই-৫।
গত ২৪ নভেম্বর হেইনান প্রদেশের ওয়েনচেং স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় চ্যাং ই-৫ নামক মহাকাশযানটি। তারপর সেটি চাঁদের মাটিতে সফলভাবে অবতরণ করে। শেষবার ১৯৭৬ সালের ২২ আগস্ট চাঁদের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে সফলভাবে অবতরণ করেছিল রাশিয়ার লুনা-২৪ চন্দ্রযান। ৪৪ বছর পরে আবার কোনও চন্দ্রযান চাঁদে সফলভাবে অবতরণ করল, যাদের লক্ষ্য নমুনা সংগ্রহ। কিন্তু সেবারের অভিযানে মাত্র ২০০ গ্রাম নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। চাঁদ থেকে ২ কেজি নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরছে চীনের চন্দ্রযান চ্যাং ই–৫। এই প্রথম কোনও দেশ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ থেকে এই পরিমাণ নমুনা সংগ্রহ করল। লুনা-২৪ এর চেয়ে অনেক বেশি নমুনা সংগ্রহ করল চীনের চন্দ্রযানটি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে চন্দ্রযানটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে।
এই চন্দ্রযানটিতে লাগানো ক্যামেরাতে ধরা পড়েছে চাঁদের মাটিতে চীনের পতাকা ওড়ার ছবিটি। সেটিই শেয়ার করেছে চীনের ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। জানা গিয়েছে, ২ মিটার চওড়া, ৯০ সেন্টিমিটার লম্বা পতাকাটি পোঁতা হয়েছে চিনের মাটি থেকে নমুনা সংগ্রহের সময়ই। প্রসঙ্গত, চীন ইতিমধ্যেই তাদের নিজস্ব জিপিএস নেটওয়ার্ক লঞ্চ করেছে। মঙ্গল অভিযানের প্রস্তুতিতেও তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। জুলাই নাগাদ তাদের তিয়ানওয়েন-১ মহাকাশযান লঞ্চ করা হয়। লাল গ্রহে জলের সন্ধান পাওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখবে এটি। সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতে ৪৭০ মিলিয়ন কিলোমিটার যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করবে মহাকাশযানটি।
এই মহাকাশযানটি মূলত মাল্টি-মডিউল প্রোব। চাঁদের কাছাকাছি পৌঁছে দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি ভাগ চাঁদের কক্ষপথে পাক খেতে খেতে নছর রাখে, অন্যটি চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে। নজরদারির জন্য রাখা ভাগটিতে থাকে সার্ভিস ভেহিকল ও অ্যাটমস্ফেরিক রি-এন্ট্রি মডিউল। এদের কাজ ছিল তদারকি করা ও প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীতে খবর পাঠানো। চাঁদের মাটিতে নামা অংশে থাকে ল্যান্ডার ও অ্যাসেন্ডার। ঠিক কোন জায়গায় টাটকা নুড়ি পাথর পাওয়া যাবে, ঠিক করে এরা। এদের রোবোটিক আর্ম নমুনা তুলে নেয়। আমেরিকা তাদের অ্যাপোলো মিশনে ৪০০ কিলোগ্রাম নমুনা এনেছিল। সেগুলোর বয়স ছিল ১০০ বছরেরও বেশি। সে তুলনায় চ্যাং ই-৫ অনেকটাই তাজা নমুনা সংগ্রহ করেছে।
অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ও ভূতত্ত্ববিদ ক্যাথলিন ক্যাম্পবেল এই অভিযানটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন। তিনি এও জানান, পরবর্তী দশ বছরে মহাকাশ অভিযান আরো জটিল ও তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।উল্লেখ্য, চীন এর আগেও চন্দ্রাভিযান করেছে। ২০১৩ সালে তারা প্রথম চাঁদের মাটিতে নামতে সফল হয়। তারপর গত বছরের জানুয়ারিতেও চ্যাং ই-৪ চন্দ্রযানটি চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করে সফল ভাবে। এখনও পর্যন্ত চন্দ্রাভিযানে ভারতকে টেক্কা দিয়ে এসেছে বেজিং। গত বছর ইসরোর চন্দ্রযান ২-এর উৎক্ষেপণ সফল হলেও ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ সফল ভাবে নামতে পারেনি চন্দ্রপৃষ্ঠে। গতিবেগ প্রত্যাশানুযায়ী কমাতে পারেনি বলেই আছড়ে পড়ে সেটি। সেখানে ভারতকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে গেল চীন।