নয়া কৃষি আইনের বিরোধিতায় উত্তাল দেশ। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দিল্লী ঢোকার চেষ্টা রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধ বেঁধেছে বিভিন্ন রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে ‘এক দেশ এক বাজার’ তত্ত্ব বাজারে প্রচারের চেষ্টা করছে বিজেপি নেতারা। এবার তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন কৃষকরা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘কোন কৃষক এই আইন আনতে বলেছে? আসলে পুঁজিপতিদের খুশি করতে চাইছে মোদী সরকার।’
কেন্দ্রের ‘এক দেশ এক বাজার’ তত্ত্বকে খারিজ করে এক কৃষক নেতা বলেন, ‘পাঞ্জাবের বাইরে গম বেচায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল বলে ’৭৬ সালে আঞ্চলিক বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। ৪০ দিনে প্রায় ১,৪৫০ জন কৃষককে জেলে ঢোকানো হয়েছিল। ওই বছরের নভেম্বরেই হাইকোর্ট রায় দিয়ে জানিয়ে দেয়, কৃষকরা যেখানে খুশি তাঁদের ফসল বেচতে পারেন। সরকার বাধা দিতে পারে না। ’৭৭ সালে জনতা দল ক্ষমতায় এসে জানিয়ে দেয়, গোটা দেশই বাজার। তারপর থেকে দেশের যে কোনও জায়গায় ফসল বেচতে পারি আমরা। বিহার, উত্তরপ্রদেশের ধান পাঞ্জাবে আসে। মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ, কমলালেবু, কলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। পাঞ্জাবের কৃষকরা তাঁদের ফসল দিল্লীর আজাদপুর মান্ডিতে নিয়ে এসে বেচেন। সুতরাং, নতুন তো কিছু নেই এই আইনে! শুধু কর্পোরেটদের খুশি করতেই এই আইন আনা হয়েছে। সত্যিটা হল, এক দেশ দুই বাজার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। একটা অবশ্যই এপিএমসি–র বাজার, আর অন্য বাজারটিতে কোনও নিয়ম-কানুন নেই। প্যান কার্ড বা সরকারি পরিচয় পত্র দেখিয়ে যে কেউ ফসল কিনতে পারে। অথচ দামের কোনও নিশ্চয়তা নেই।’
কৃষক নেতাদের বক্তব্য, গোটা দেশের সব কৃষকরাই কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এই আন্দোলনকে পাঞ্জাবের আন্দোলন বলে দাগিয়ে দেওয়া বৃথা। দেশজুড়ে যে আন্দোলন দানা বাঁধছে, সেটা মোদী সরকার মেনে নিতে পারছে না, কটাক্ষ তাঁদের।
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের নয়াদিল্লীর বুরারি পার্কে গিয়ে আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আগামী ৩ ডিসেম্বর আলোচনায় বসবেন। আলোচনা চাইলে রাস্তা আটকে সাধারণ মানুষের অসুবিধা করা যাবে না বলেও উল্লেখ করেছিলেন। ক্রান্তিকারী ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা সরজিৎ সিং অমিত শাহের সেই পরামর্শ মানবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন। যন্তরমন্তরে আন্দোলন করতে দিতে হবে বলে জানিয়ে আরও তিনটি দাবি পেশ করেন। সেগুলি হল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ও ফসল কেনার প্রতিশ্রুতি, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত নতুন অর্ডিন্যান্স বাতিল ও ফসলের উচ্ছিষ্ট পোড়ানোর জরিমানা মকুব। নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের পাশাপাশি এই তিনটি দাবি মানতে হবে বলেও জানান তিনি।